কাফনের কাপড় পড়ে নিপীড়নের প্রতিবাদ ১০ তরুণীর। ছবি: সংগৃহীত
‘‘আমি ‘মানুষ’ বিচারহীন রাষ্ট্রে খুন ও ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিচ্ছি’’, ভিকটিম পক্ষ। গায়ে কাফনের কাপড় পরে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও বিচারহীনতার এমন প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১০ তরুণী।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে ‘ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি’ নামে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান তারা।
ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে খুন হওয়া ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে এমন নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এরই অংশ হিসেবে ব্যতিক্রম এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন ১০ তরুণী। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে 'নারী নিপীড়ন এবং বিচারহীনতার প্রতিবাদ' সংগঠনের আহ্বায়ক শারমিন জাহান অর্পি বলেন, নুসরাত জাহান রাফির মতো হাজার হাজার ঘটনা ঘটলেও অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, অনেকে থেকে যাচ্ছে বিচারের বাইরে। একটা অপরাধের বিচার না হলে আরেকটা অপরাধের সুযোগ পায় মানুষ। তনু, নুসরাতসহ অন্য নারীরা নিপীড়নের জন্য রাষ্ট্রের বিচারহীনতার সংস্কৃতিই দায়ী।
ব্যতিক্রম প্রতিবাদের কারণ হিসেবে অর্পি বলেন, 'আমরা এ রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত। আমাদের মনে হয়েছে, রাষ্ট্রের কাছে নিপীড়কের বিচার না চেয়ে আমাদের নিজেদেরই খুন বা ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া উচিত। তাই আমাদের এ ধরনের প্রতিবাদ।'
প্রতিবাদী এ নারী আরও বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। শাহবাগে নিয়মিত দাঁড়াব কাফনের কাপড় পরে। কারণ আমরা রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত। আর নয়। আমাদের মনে হয়েছে যে রাষ্ট্রের কাছে নিপীড়কের বিচার চাইবার চেয়ে আমাদের নিজেদেরই বুঝি খুন বা ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া উচিত। তাই আমরা আমাদের প্রতিবাদী ইভেন্টে মূলত মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেব।
প্রসঙ্গত গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে, এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই ভবনের তিন তলায় যান। সেখানে মুখোশধারী বোরকা পরিহিত ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।