Logo
Logo
×

রাজধানী

কোথায় যাচ্ছে ওয়াহেদ ম্যানশনের ২৮ ট্রাক রাসায়নিক দ্রব্য?

Icon

গাজী আল মামুন

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪০ এএম

কোথায় যাচ্ছে ওয়াহেদ ম্যানশনের ২৮ ট্রাক রাসায়নিক দ্রব্য?

ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্ট থেকে রাসায়নিক দ্রব্য সরানো হচ্ছে। ছবি: যুগান্তর

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত যে ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে, তার বেজমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসছে টনে টনে রাসায়নিক পদার্থ। 

শনি ও রোববার দু’দিনে উদ্ধার করা হয়েছে ২৮ ট্রাক রাসায়নিক দ্রব্য। এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।

তবে এসব রাসায়নিক দ্রব্য কোথায় নেয়া হচ্ছে এর সদুত্তর দিতে পারেননি কেউ। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও চকবাজার থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে রাসায়নিক পদার্থ সরিয়ে নিতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (অঞ্চল-৩) উদয়ন দেওয়ানকে প্রধান করে একটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে আরেকটি টিম গঠন করা হয়।

এ দুই টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্ট থেকে রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার কাজ তদারকি করেন এবং তা প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দেন।

রোববার সরেজমিন দেখা যায়, ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্ট থেকে শ্রমিকরা মাথায় করে রাসায়নিক দ্রব্য ভর্তি বস্তা ও কৌটা ট্রাকে উঠাচ্ছে। 

এরপর এগুলো মালিকপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে কোথায় নেয়া হচ্ছে এসব রাসায়নিক, সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট উদয়ন দেওয়ান যুগান্তরকে বলেন, আমরা রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছি। মূলত পুলিশ মালিকপক্ষকে মালামাল বুঝিয়ে দিচ্ছে।

সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী একিন আলী যুগান্তরকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এসব রাসায়নিকের প্রকৃত মালিককে খোঁজা হয়েছিল, তিনি অসুস্থ থাকায় তার প্রতিনিধি আফজাল হোসেনের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, শনি ও রোববার দুই দিনে ২৮ ট্রাক মাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রতিটি ট্রাকে কমপক্ষে ১ হাজার কেজি মাল ছিল। প্রকৃত ওজন আরও বেশি হতে পারে। 

এসব রাসায়নিক কোথায় নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মালিকের প্রতিনিধি আফজাল হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি (অপারেশন) মনির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আবাসিক এলাকা থেকে এগুলো দ্রুত অপসারণ করতে হবে। 

এজন্য প্রকৃত মালিকের কাছে তা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ কেবল মাল বুঝিয়ে দিচ্ছে এবং নোট রাখছে। যাতে পরে অন্য কেউ এসে দাবি করতে না পারে।

বেজমেন্ট থেকে এত বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক বের হতে দেখে হতভম্ব স্থানীয় বাসিন্দারাও। 

তারা বলছেন, কোনোভাবে ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্টে আগুন লাগলে পুরো চকবাজার পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যেত। 

অথচ ৬৭ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়া বুধবারের ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই একটি পক্ষ দাবি করে আসছিল, ওই ভবনে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নেই।

এদিকে চকবাজারের ট্র্যাজেডির চার দিন পরও ভিড় করছেন কৌতূহলী মানুষ। রোববার ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্ট থেকে বিপুল পরিমাণের রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধারের দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা কৌতূহলবশত ভবনটির পাশে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের কড়াকড়ির কারণে তারা এগোতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আওয়াল (৭১) যুগান্তরকে বলেন, আজও (রোববার) যে মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে তাতে আগুন লাগলে আমরা বাঁচতে পারতাম না। এখনই আবাসিক এলাকা থেকে সব রাসায়নিক পদার্থ সরানো উচিত।

ঘটনার পর থেকে লাপাত্তা দুই মালিক: বুধবার রাতে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক দুই ভাই মো. হাসান (৫০) ও মো. সোহেল ওরফে শহীদ (৪০)।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ দু’জনই নিরাপদে আছেন। 

অগ্নিকাণ্ডে নিহত ওয়াসিউদ্দীন মাহিদের বাবা নাসিরউদ্দীন বলেন, আমি শুনেছি, ঘটনার দিন হাসান সপরিবারে চট্টগ্রামে ছিলেন। 

আর আগুন লাগার পর আরেক মালিক সোহেল ওরফে শহীদ ও তার মাকে ভবন থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছি আমি।

ওয়াহেদ ম্যানশনে দীর্ঘদিন কাজ করেন মিরাজ হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি এ ভবনে ১৭-১৮ বছর রঙের কাজ করছি। বাড়িটির মূল মালিক সাবেক কমিশনার ওয়াহেদ হাজী। তার মৃত্যুর পরে দুই ছেলে ও তাদের মা এই ভবনে বাস করতেন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওয়াহেদ ম্যানশনের এই দুই মালিকের নাম উল্লেখসহ ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে চকবাজার থানায় মামলা করেন মো. আসিফ। আসিফের বাবা মো. জুম্মন চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে মারা যান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার থানার ওসি (তদন্ত) মোরাদুল যুগান্তরকে বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, তারা ওই ভবনে সব সময় থাকতেন না। মাঝেমধ্যে আসতেন। 

বেজমেন্টসহ ভবনটির পাঁচটি তলায় পাঁচটি ইউনিট ও প্রতিটি ইউনিটে চারটি করে ঘর ছিল। দুটি ইউনিটে দুটি পরিবার ভাড়া ছিল। আর নিচতলায় দোকানপাট ভাড়া দেয়া ছিল।

এদিকে রোববার বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং ভবনের নিচে রাখা রাসায়ানিক দ্রব্য দেখেন। পরে তিনি সেখানে উপস্থিত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম