
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৯ এএম
খুবি ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার হস্তান্তরের দাবি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে পরিচিত। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দেশ-বিদেশে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি এবং গবেষণার মাধ্যমে কৃষি, পরিবেশ, নগর পরিকল্পনা, মৎস্য ও সমুদ্র সম্পদসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতেও সক্ষম হচ্ছে।
আট হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভূমির পরিমাণ প্রয়োজনীয় ভূমির মাত্র এক-পঞ্চমাংশ। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের কারণে ভূমি সংকট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট ও জীব বিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনসমূহের মাঠ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় জমি না থাকায় সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণের দাবি ও প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে তৎকালীন সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্প্রসারণের নিমিত্তে ৩ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা।
পরে ৬ নভেম্বর প্রশাসনিক ভবনের সামনে জমি অধিগ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে অবস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি অবিলম্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হস্তান্তরের দাবি জানায়।
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি এবং ভূমি সংকটের গুরুত্ব বিবেচনা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
মৎস্য খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তরের জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর সচিবদের মৌখিকভাবে অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি পত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়।
এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম শিক্ষা উপদেষ্টা ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তখন তারা বিষয়টি নিয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ করেন। এরপরও কোনরূপ সুরাহা না হওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ গত ৯ মার্চ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ‘শহিদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ উদ্বোধন শেষে শিক্ষার্থীদের মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার অধিগ্রহণের দাবিকে তিনি ‘মীর মুগ্ধ’-এর দাবি হিসেবে অভিহিত করেন।
এ দাবি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছে, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার- দুটিই সরকারি প্রতিষ্ঠান। উভয় প্রতিষ্ঠানের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসবে বলে আশা করি।’
পরবর্তীতে গত ১৪ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট হস্তান্তরে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণা দেন। যেখানে তিনি গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার অভ্যন্তরে একটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে অবস্থিত। তিন দিকে ঘেরা এ জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিকতা, নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত পরিকল্পনায় অন্তরায় সৃষ্টি করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ১০.৩৫ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা অত্যন্ত জরুরি।
জমিটি হস্তান্তর করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় এলাকার সংযোগ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের আবাসিক এলাকা সম্প্রসারণ, নিরাপত্তা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, প্রাকৃতিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখভাগের সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়ন এবং গবেষণার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
তাছাড়া, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি (এফএমআরটি) ডিসিপ্লিন মৎস্য গবেষণায় দেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাই জমিটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা হলে এফএমআরটি ডিসিপ্লিন একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যা মৎস্য চাষ, প্রজনন ও সংরক্ষণে দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বহুগুণ ফলাফল অর্জিত হবে এবং আর্থিক দিক দিয়েও সরকার লাভবান হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ময়ূর নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব ছিল, যা এই স্থাপনার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা ছিল। কিন্তু বর্তমানে পলি জমার কারণে ময়ূর নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে এবং রূপসা নদীর সঙ্গে এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় নদীটি ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ, নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাবও আর নেই। তাই মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটিকে জোয়ার-ভাটা সম্পন্ন নদীর পাশে একটি বড় জায়গায় স্থানান্তর করাই যুক্তিযুক্ত।
এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জমি সংকটের কারণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে জমি অধিগ্রহণ ও গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ পরিস্থিতিতে খামারের জমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা গেলে, এটি বর্তমান সংকট নিরসনে এবং শিক্ষার্থীদের দাবির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।