জাবিতে যত্রতত্র ময়লা, বাড়ছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বেড়েছে মশার উপদ্রব। এতে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্যাথলজি বিভাগ থেকে জানা যায়, আগস্ট মাসে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন ডেঙ্গু টেস্ট করিয়েছেন। তখন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দিনে পাঁচ থেকে সাতজন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত দিনে গড়ে ১২০ থেকে ১৩০ জন ডেঙ্গু টেস্ট করাতে আসছেন। আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে ১২ থেকে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অপরিকল্পিত নগরায়ন, ঘন ঝোপঝাড়, ড্রেন, নর্দমা, ময়লা-আবর্জনা ও জলাশয়গুলোর নোংরা পানি এবং যত্রতত্র জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশার উৎপত্তি বেশি হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া মশা নিধনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়মিত ওষুধ ছিটানো ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান থাকার কথা থাকলেও তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
সন্ধ্যার পর মশার উৎপাত চরম আকার ধারণ করে। কাজ হচ্ছে না কয়েল কিংবা অ্যারোসল ব্যবহারে। দিনের বেলায়ও হল কক্ষগুলোতে টানাতে হচ্ছে মশারি। ভয়াবহ এ উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টদের থেকে জানা যায়, দিনের বেলা কম হলেও সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই মশার উৎপাত ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সন্ধ্যার পর মুক্তমঞ্চ, সেন্ট্রাল ফিল্ড, টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের কোথাও বসা মুশকিল হয়ে পড়েছে। হল ও আবাসিক এলাকাগুলোতে নিয়মিত ছিটানো হচ্ছে না মশক নিধন ওষুধ। পুরো ক্যাম্পাসের অধিকাংশ জায়গায় দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে জমে থাকে অপরিষ্কার পানি। লেকগুলোর আশপাশ ভরে আছে ঝোপঝাড়ে। এছাড়া যত্রতত্র জমে আছে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ।
মশা নিধনে হল কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে? জানতে চাইলে শহীদ সালাম-বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু বলেন, প্রতি সপ্তাহে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। আগে একবার ছিটিয়েছি, মাঝখানে মনে হয় আরেকবার ছিটানো হয়েছে। মশার ওষুধগুলো খুবই দামি। তাই একবার ছিটাতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তবে উপদ্রব ঠেকাতে ড্রেন, হলের আশ-পাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনগুলো যে লেটেস্ট টেকনোলজি ব্যবহার করছে তা আমাদের এখানে ব্যবহার করতে পারলে মশার উপদ্রব কমাতে সহায়ক হতে পারে।
মশার উপদ্রব বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মশা গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, যখন কোনো একটা জায়গায় নগরায়ন বাড়তে থাকে তখন সেখানে ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস ইজিপ্টি বাড়তে থাকে। এটি নগরের মশা। আমাদের যেহেতু অনেকগুলো প্রজেক্ট চলছে তার কারণে এই মশা থাকতে পারে। তবে তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কারণ এর আগে ক্যাম্পাসে এ মশা ছিল না। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবন ও ছোট-বড় পাত্রে জমে থাকা পানি খুবই বিপজ্জনক। এছাড়া ক্যাম্পাসে থাকা নর্দমার পানি ও ঝোপঝাড়ের কারণে কিউলেক্স মশার পরিমাণ বাড়ছে।
এস্টেট অফিসের কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, আমরা ধাপে ধাপে ওষুধ ছিটাচ্ছি। বৃষ্টির কারণে নিয়মিত স্প্রে করা যাচ্ছে না। আর বৃষ্টিতে স্প্রে করলে কাজেও আসে না। ঝোপঝাড়গুলো কাটা হবে। এছাড়া হলগুলোতে ওষুধ দেওয়ার দায়িত্ব হলো কর্তৃপক্ষের। তবে কারও স্প্রে মেশিন না থাকলে আমাদের জানালে এস্টেট অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়।