জাবিতে নিয়োগ বোর্ডে বাধার নেপথ্যে ছাত্রলীগ নেত্রী
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষক নিয়োগে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার ঘটনার পেছনে এক নেত্রীর নাম উঠে এসেছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয়তলায় উপাচার্য অফিসের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এর আগে বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে নিয়োগ না দেওয়াই ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের নিয়োগ কার্যক্রমে ছাত্রলীগের বাধার মূল কারণ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রসায়ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন প্রভাষক ৩৯, ৪২ ও ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই নিজ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তবে ছাত্রলীগের সহসভাপতি পাপড়ি স্নাতকে পঞ্চম ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত ও প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গত ৩০ আগস্ট প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী নিয়ে সাবেক উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. শরীফ এনামূল কবিরের কক্ষে যান ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। তখন সাদিয়াকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম এবং অধ্যাপক মো. শরীফ এনামূল কবিরকে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমরা তো চাইলে ওই দিন সিন্ডিকেট সভা বন্ধ করে দিতে পারতাম। এ ঘটনার সঙ্গে রসায়ন বিভাগের নিয়োগের কোনো সম্পর্ক নাই।’
পাপড়ির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। কেউ হয়তো আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘কোনো একটি বিশেষ নিয়োগের জন্য একটি ছাত্র সংগঠন অন্য একটি বিভাগের নিয়োগের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করবে এগুলো নজিরবিহীন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ প্র্যাকটিসগুলো শুধু এখন না ভবিষ্যতেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। নিয়োগ বোর্ডে এ ধরনের বাধা ছাত্রসুলভ আচরণ নয়। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবে।’
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডে ছাত্রলীগের বাধা দেওয়ার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত। যোগ্যতা থাকলে চাকরি হবে, এখানে ছাত্রলীগ প্রভাব সৃষ্টি করবে কেন? এ ঘটনা ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে বলে আমরা মনে করি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে ৪০ জনকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যতগুলো নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলাম সবগুলোতেই যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়েছি। আগেও অনেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু আমি প্রভাবিত হইনি, ভবিষ্যতেও হব না।’