রাবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর বন্ধ

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১১:০৪ পিএম

অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি নিয়োগের আদেশ প্রত্যাহার এবং নিজ বিভাগ থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি নিয়োগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। দুপুর ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় শিক্ষার্থীরা সেখানে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নামাজ আদায় করতে প্রশাসনিক ভবনে থেকে বের হতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেন। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ছাত্রদের বিভাগের বিষয়ে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না। আমরা রোজা রেখে তাদের অনুরোধ করেছি, আমাদের নামাজ পড়ার জন্য আপনারা যেতে দেন কিন্তু তারা আমাদের যেতে দেননি। এ কাজ যারা করেছে তারা দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল চায় না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য তারা এ ধরনের কাজ করেছে। এ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সুবিচার না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সব কাজ বন্ধ থাকবে। এছাড়া অন্যান্য সমিতি, ইউনিয়ন মিলে বৃহত্তর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনকে স্বপদে-স্ববেতনে ও প্রেষণে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে বদলি করা হয়। যোগদানের তারিখ থেকে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী আগামী তিন বছরের জন্য ওই বিভাগের সভাপতি নিয়োগ করা হয়।
এছাড়া ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদারকে বিভাগের সভাপতির রুটিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয় আদেশটিতে। আজকের কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ওই আদেশ প্রত্যাহার করে নিজ বিভাগ থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
কর্মসূচিতে বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাইফ রহমান বলেন, আমাদের বিভাগে যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রাতের আঁধারে ফাইন্যান্স বিভাগের একজন শিক্ষককে বদলি করে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে। আমরা অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি চাই না।
বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অন্য বিভাগের শিক্ষককে আমরা সভাপতি হিসেবে চাই না। আমাদের বিভাগ থেকে একজনকে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এর আগে ওই বিভাগের সভাপতি অন্য বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু এবার কেন তাদের সমস্যা হচ্ছে, সেটা আমার বোধগম্য নয়। তারপরও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের থেকে স্মারকলিপি নিয়েছেন এবং আশ্বাস দিয়েছে এ বিষয়ে আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন; কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখনই এটার সমাধান চায়, যেটা আসলে সম্ভব না। এভাবে জিম্মি করে দাবি আদায় কোনো সভ্য সমাজের কার্যক্রম হতে পারে না।