ইবিতে রেজিস্ট্রার পদ ভাগাভাগি নিয়ে হট্টগোল

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৩০ পিএম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) রেজিস্ট্রার পদ ভাগাভাগি নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কার্যালয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এ নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনাকালে উপ-উপাচার্যের সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডির কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
পরে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থি প্রক্টরকে উপ-উপাচার্য ‘জামায়াত’ ট্যাগ দিলে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে গেলে পূর্ব থেকে সেখানে অবস্থান করা ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য হয়। এর আগে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে ছাত্রদলের নেতারা সাংবাদিকদের বের করে দেন।
জানা যায়, রেজিস্ট্রার পদে থাকা আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা আলী হাসানকে তার পদ থেকে সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে এ পদে আনার দাবিতে সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর দাবি জানানো হয়।
এদিকে ছাত্রদল ও বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের মনোপুত এক কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রার পদে বসাতে চাওয়াকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত বলে জানায় ছাত্রদলের এক নেতা। এর আগে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা রেজিস্ট্রারকে তার পদ ছাড়তে তার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও কয়েক দফায় হুমকি দেয়।
এদিকে আওয়ামী আমলে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও তাদের মনপুত ব্যক্তিকে পদে বসাতে উপাচার্যের কার্যালয়ে একাধিকবার হট্টগোল করার নজির রয়েছে। ৫ আগস্টের পরেও এমন ঘটনা ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধীদের দাবি, ছাত্রলীগের মতো একই পথে হাঁটছে ছাত্রদল। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে পদ-পদবির জন্য লালায়িত হওয়া নব্য ফ্যাসিস্ট আগমনের বার্তা দেয়। তাদের ছাত্রলীগের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
ক্যাম্পাস সূত্রে, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে অপসারণের দাবিতে বেলা সাড়ে ১২টায় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হট্টগোল শুরু করে। পরে দুপুর পৌনে ১টার দিকে জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জান খান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সদস্য নুর উদ্দিন, রাফিজ আহমেদ, তৌহিদুল ইসলাম, আলিনুর রহমান, উল্লাস মাহমুদ ও মুফতাঈন আহমেদ সাবিক সহ অন্যান্য কর্মীরা ভিতরে থাকা সাংবাদিকদের বের করে দেন।
একপর্যায়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরে কক্ষের মধ্যে উচ্চবাচ্য শুনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলেও ছাত্রদল কর্মীরা তাদের বাধা দেন। পরে তাদের উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢুকলে সমন্বয়ক এসএম সুইট ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বিএনপিপন্থি প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানকে ‘জামায়াত’ বলে আখ্যা দিলে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ প্রক্টরের। এছাড়া সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলামকে ধাক্কা দেন উপ-উপাচার্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় উপ-উপাচার্য উত্তেজিত হয়ে উপাচার্যের দিকে একাধিকবার তেড়ে যান। এছাড়া কার্যালয় ত্যাগ করার সময় উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে উপ-উপাচার্য বলেন ‘ভিসি কিভাবে তার পদে থাকে তা আমি দেখব’। তবে উপ-উপাচার্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে ছাত্রদলের এহেন কর্মকাণ্ডে দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার পদে বিএনপিপন্থি একজন কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাদের একজন কর্মকর্তার বিপরীতে কয়েকজনকে প্রস্তাব করার কথা বলায় তারা ছাত্রদলের প্যাডে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবির সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও মাসুদ রুমি মিথুন ভিসির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রক্টরের বিষয়টি তুললে উপ-উপাচার্য প্রক্টরকে ‘জামায়াত’ বলে সম্বোধন করলে হট্টগোল তৈরি হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ৩টায় গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্বে বাধা ও শিক্ষক হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইবি ছাত্র ইউনিয়ন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, পদ ভাগাভাগি নিয়ে প্রশাসনকে চাপ দেওয়া পতিত স্বৈরাচারী মনোভাবের সঙ্গে মিলে যায়। আজকের এ ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। দোষীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর বিচার করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা বিকল্প ব্যবস্থা নিতে নিতে বাধ্য হবে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, উপাচার্য কার্যালয়ে এক জুনিয়র শিক্ষক আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। কিন্তু উপাচার্য এর কোনো প্রতিবাদ করেনি। উপাচার্য এর বিচার না করলে আমি বিষয়টি অন্যভাবে দেখব। আমি প্রক্টরকে ‘জামায়াত’ বলিনি, অন্য কোনো এক কর্মকর্তা তাকে এটা বলেছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, উপাচার্যের কার্যালয়ে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেব।