Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

চবির ১০ ছাত্রী বহিষ্কার, প্রক্টরের সঙ্গে নেতার কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস

Icon

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম

চবির ১০ ছাত্রী বহিষ্কার, প্রক্টরের সঙ্গে নেতার কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস

৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শেখ হাসিনা হলে (বর্তমানে বিজয় ২৪ হল) নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙতে যাওয়া ও হলের ছাত্রীদের বাধা দেওয়ার ঘটনায় ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

এবার ঘটনার নতুন মোড় দিয়েছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই সহকারী প্রক্টরের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া স্ক্রিনশট। সম্প্রতি স্ক্রিনশটগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হয়। 

দুই সহকারী প্রক্টর হলেন- অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলী ও মো. নুরুল হামিদ।

একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, কোরবান আলী ওই রাতে উপস্থিত ৩ ছাত্রীর নাম, ছবি, বিষয় ও শিক্ষাবর্ষ হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন।

ফেসবুক মেসেঞ্জারের একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায় নুরুল হামিদ লিখেছেন, ‘তোমরা আগামীকাল কঠিন কর্মসূচি দাও। অন্তত যেন প্রাথমিক শাস্তি হিসাবে হল থেকে বের করে দেয়।’ 

অন্য আরেকটি মেসেজে তিনি লিখেছেন, ‘এদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিতে প্রশাসনকে চাপ দাও। প্রক্টর অফিস ঘেরাও কর। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে।’

নুরুল হামিদ এই মেসেজ বেশ কয়েকজনকে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ফাঁস হওয়া স্ক্রিনশটগুলো একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। প্রথম মেসেজটির উত্তরে এই নেতা লেখেন ‘জ্বি স্যার’, দ্বিতীয়টির উত্তরে লেখেন ‘জ্বী স্যার। আমাদের প্ল্যান আছে এটা নিয়ে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা যুগান্তরকে বলেন, স্ক্রিনশটগুলো সঠিক। তবে এগুলো ফাঁস হলো কীভাবে তা নিশ্চিত নই। এই কথোপকথনের সময় ঢাকায় ছিলাম। কোনো কাহিনি বা কী হলো কিছুই জানতাম না। স্যার মেসেজ দিয়েছেন দেখে রিপ্লাই দিয়েছিলাম।

সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের ফ্যাসিবাদী স্থাপনা উচ্ছেদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই হলের ফ্যাসিবাদী চিহ্নসদৃশ স্থাপনা ভাঙতে গেলে ওই হলের কতিপয় ছাত্রীরা বাধা দেয় এবং ছাত্রদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে। পরদিন হাসিনার বক্তব্যের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের ন্যায় চবিতেও শিক্ষার্থীরা ফ্যাসীবাদী চিহ্ন অপসারণের কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং হাসিনা হলের সামনের নৌকাসদৃশ স্থাপনা ভাঙতে গেলে ওই হলের অল্পকিছু শিক্ষার্থী উক্ত স্থাপনাকে বসার জায়গা দাবি করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি রাতেই ওই ঘটনার অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য, ভিডিও ও ছবি আমাদের হাতে আসে। তদন্তের স্বার্থে আমরা চুপ থাকি। ওই রাতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের তথ্য চেয়ে সাংবাদিকরা, ভুক্তভোগী শিক্ষকদের পক্ষের সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এবং শিক্ষক হেনস্তার বিচার চাওয়া ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা আমাদের কাছে বারবার ফোন ও ম্যাসেজ করে। তারা রাতারাতি বিচার দাবি করে। 

আমি বলেছি, ঘটনায় জড়িত সে যেই হোক, শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা, ভিসির বাংলোতে হামলার উদ্দেশে যাওয়া, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও শিক্ষার্থীদের ওপর ইট-লাঠি নিয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। ন্যূনতম শাস্তি হিসেবে হল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। 

তিনি বলেন, পালটা উত্তরে তারা রাতারাতি শাস্তি চাইলে আমি বলি, এভাবে রাতারাতি হয় না, শাস্তি চাইলে তোমরা নিজেরাই প্রশাসনের কাছে চাও, দরকার হলে যৌক্তিক দাবিতে ও শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন কর। 

জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও চবি ছাত্র মজলিসের সভাপতি রুমি বলেন, স্যার আন্দোলনের বিষয়ে আমাদের নিজেদের প্ল্যান আছে এবং হামলায় জড়িত একজন আগে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, শুক্রবার হওয়ায় স্ক্রিনশটগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া যায়নি। শনিবার বিষয়টা দেখব।

প্রসঙ্গত, ৫ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনার জেরে ১৩ ফেব্রুয়ারি ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় তাদেরকে চিঠি দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো তারা কোনো চিঠি পাননি বলে জানা গেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম