Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

ভিসি অপসারণে যেসব কারণ প্রধান উপদেষ্টাকে জানাল কুয়েট শিক্ষার্থীরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম

ভিসি অপসারণে যেসব কারণ প্রধান উপদেষ্টাকে জানাল কুয়েট শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দাবি নিয়ে প্রধান উপদষ্টোর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে দুটি বাসে ঢাকায় আসেন কুয়েটের ৮৪ শিক্ষার্থী। এরপর তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান করেন।

পরে শিক্ষার্থীদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদষ্টোর বাসভবন যমুনায় গিয়ে স্মারকলিপি দেন। প্রধান উপদষ্টোর পক্ষ থেকে সাব্বির আহমদ নামে এক কর্মকর্তা তা গ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। এ সময় শহিদ মিনারে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে। ঢাকায় অবস্থানরত কুয়েটের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। পরে বিকালের দিকে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যে যার অবস্থানে চলে যান।

জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল ও যুবদলের হামলার ঘটনার পর থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ইতোমধ্যে আবাসিক ও অনাবাসিক অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুয়েট থেকে দুটি বাসে ৮৪ শিক্ষার্থী ঢাকায় আসেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পযন্ত তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন না বলেন জানান।

এরপর দুপুরের দিকে তাদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদষ্টোর বাসভবন যমুনায় যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে কঠোর শাসি্তর আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে অভিভাবকহীন ও অনিরাপদ কুয়েট ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চালুর জন্য অতিদ্রুত নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি যথোপযুক্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চিহ্নিত কুয়েট ছাত্রদল এবং স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন কতর্ৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে স্বীকার না করায় কুয়েট প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব শিক্ষার্থী। এরপর প্রধান উপদষ্টোর কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি পেশ করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারির পর আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে বললেও তা নিশ্চিত করতে পারেনি। সেদিন হামলায় আহত অনেকে ঢাকায় ভর্তি আছেন। মাথায় ২৬টি সেলাই লেগেছে এমন আহতও আছেন। আহতদের মধ্যে হাতের হাড় তিন ভাগ হয়েছে এমনও আছেন। ডাক্তার বলছে, হয় হাত কেটে ফেলতে হবে অথবা উপরওয়ালার ওপর আস্থা রাখতে হবে। আর কোনো কিছু করার নেই। তারা বলেন, কুয়েটের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর একটা মানুষ কুয়েট ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে বহিরাগত ছাত্রদল, যুবদল সন্ত্রাসীরা আমাদের কুপিয়েছে। সবশেষে আমরা প্রধান উপদষ্টোর কাছে আমাদের কষ্টের কথা তুলে ধরে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছে। সরকারকে উদ্দেশ করে তারা বলেন, যে সরকার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমরা কাউকে কষ্ট দিতে আসিনি। আমরা জানাতে এসেছি যে আমরা নিরাপদ একটা ক্যাম্পাস চাই।

প্রধান উপদষ্টোর কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে উলে্লখ করা ছয়টি দাবি হলো১. কুয়েটের সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অধীনস্থ সবাই কোনো প্রকার রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবে না। ২. কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং এদের প্রশ্রয়দাতা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসন থেকে হত্যাচষ্টো ও নাশকতার মামলা করতে হবে এবং জড়িত সবাইকে বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। ৩. আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে কুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরে পর্যাপ্তসংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্যের সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. আহত সবার চিকিত্সাসংক্রান্ত ব্যয়ভার কুয়েট প্রশাসন থেকে বহন করতে হবে। ৫. ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করেছে, এ মর্মে কুয়েটের প্রশাসন থেকে বিবৃতি দিতে হবে। ৬. উপরিউক্ত সব দাবি পূরণ করে ঘটনার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে, নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র ক্যাণের পরিচালককে পদত্যাগ করতে হবে।

খুলনা ব্যুরো জানায়, কুয়েট থেকে রওয়ানা হওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তারা বলেন, আমরা নিজেরাই টাকা জোগাড় করে প্রধান উপদষ্টোর কাছে যাওয়ার জন্য বাস ভাড়া করেছি। কুয়েট প্রশাসন আমাদের বাস দিয়ে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরা অনিরাপদ ও আতঙ্কিত তাই বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে পারছি না। আমরা চোখে ও মুখে লাল কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাস টোটাল শাটডাউন করে ক্যাম্পাস থেকে চলে যাচ্ছি। আমাদের সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কুয়েটে কোনো একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে না।

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন : এদিকে দুপুরে খুলনা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের ৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। এর প্রতিবাদে কাল মঙ্গলবার দুপুরে কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শাফিকুল আলম তুহিন। এ সময় তিনি বলেন, কুয়েটসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' ও ‘একটি গুপ্ত সংগঠনের’ কার্যক্রম রয়েছে। এমনকি নিষদ্ধি ‘ছাত্রলীগের’ কমিটি রয়েছে। অথচ ছাত্রদল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গেলেই তাদের যত বিপত্তি।

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম