Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

অবৈধ বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ বন্ধে কর্মচারীদের তোড়জোড়

Icon

ইমরান খান, শেকৃবি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৪ এএম

অবৈধ বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ বন্ধে কর্মচারীদের তোড়জোড়

ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের দাবিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) অবৈধ বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিভিন্ন কারণে কিছুদিন উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত থাকলেও এটি পুনরায় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভাড়াটিয়া ও গরু-ছাগলের খামার উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ভাড়াটিয়া অবস্থানকারী কয়েকটি বাড়িতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে এই উচ্ছেদ ঠেকাতে তোড়জোড় শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী, যাদের ইন্ধন দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে উচ্ছেদের পক্ষে সংক্রিয় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠে এসব অবৈধ স্থাপনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য বিনামূল্যে এসব জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলেও, তারা এর বাইরে জায়গা দখল করে বস্তি গড়ে তুলেছেন। এসব বস্তি বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে কর্মচারীরা নিয়মিত আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। বহিরাগতদের অবাধ বিচরণের বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। 

গত বছরের সেপ্টেম্বরে অধ্যাপক মো.আবুল বাশার প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে অবৈধ বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ শুরু করেন। অক্টোবরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেলে অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত হয়। ওই মাসে অধ্যাপক ড. আরফান আলী নতুন প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পুনরায় শুরু করেন। 

ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে অবস্থানকারী ৩০০ পরিবারের মধ্যে ২১০টি পরিবার ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। এরপরে কিছুদিন অভিযানে মন্থরতা দেখা দিলে  ভাড়াটিয়ারা পুনরায় ফিরে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। 

সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এ বছরের জানুয়ারিতে প্রক্টরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সেসময় ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ভাড়াটিয়াদের ক্যাম্পাস ত্যাগ এবং অবৈধভাবে দখলকৃত সব স্থাপনা ও জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এসময় ক্যাম্পাসের মধ্যে কর্মচারীদের অবৈধ একাধিক গরু-ছাগলের খামার উচ্ছেদ করা হয়। 

গত ৪ ফেব্রুয়ারী নির্দেশনা না মানায় ভাড়াটিয়া অবস্থানকারী কয়েকটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শেকৃবি প্রশাসন। এর ফলে গত ১১ ফেব্রুয়ারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার নেতৃত্বে কিছু কর্মচারী অভিযান বন্ধের সুপারিশ নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে আসেন। 

এদের মধ্যে অধিকাংশের বিরুদ্ধে বরাদ্দকৃত জায়গার বাইরে অতিরিক্ত জায়গা দখল করে বহিরাগতদের ভাড়া দেবার অভিযোগ রয়েছে। এসময় তারা বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন। এরমধ্যে বেশিরভাগ কর্মকর্তা উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে থাকলেও কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশাসনকে চাপ দেওয়ার পরামর্শ দেন এবং তাদের দাবির পক্ষে আছেন বলে জানান। পরবর্তীতে কর্মচারীরা দাবি নিয়ে প্রক্টরের দেখা করেন।

তবে এই উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে সংক্রিয় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। 

শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বিএম আলমগীর কবির বলেন, ‘অবৈধ ভাড়াটিয়া ও বহিরাগতদের অবাধ বিচরণে ক্যাম্পাসে মাদকের প্রভাব বেড়ে যায়। আমরা দ্রুত বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ চাই। এতে প্রশাসনের কোন সাপোর্ট দরকার হলে আমরা সেটা করবো।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের কৃষি ও পরিবেশ সেলের সম্পাদক ও শেকৃবির প্রধান সমন্বয়ক মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক বলেন, ‘বস্তির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য জায়গা কমে গেছে। মাদকদ্রব্য সহজ লভ্য হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর বিপদগামী হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। বস্তি ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নিলে আমরা তাদের বিরুদ্ধের প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।’

কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘কর্মচারীদের পক্ষে আমরা কিছু দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম। কারো দখলে অতিরিক্ত জায়গা থাকলে আমরা নিজেরাই সেগুলো সরিয়ে নেব। এজন্য আমরা আরো কিছুদিন সময় চেয়েছি।’

প্রক্টর অধ্যাপক ড. আরফান আলী বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সময় দিয়েছি। অনেকেই নির্দেশনা অমান্য করেছে। ফলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। নিয়মের মধ্যে থাকলে আমরাদেরও শক্ত অবস্থানে যেতে হবে না। তবে নিয়মবহির্ভূত কোন ব্যপারে কারো অনুরোধ শোনা হবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে আমি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। এব্যপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’ 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম