‘ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত সহযোগিতায় স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত হবে’

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম

বিভিন্ন ঐতিহ্যের ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমেই দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশ নিয়ে বক্তারা এ কথা বলেছেন।
‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কশপ অন মাল্টিফেইথ ডায়লগ (আইডব্লিওএমডি ২০২৫)’ ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের মূল অডিটোরিয়ামে শুরু হয়েছে। কর্মশালাটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাবির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। সম্মেলনটি বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ঢাবির অধ্যাপক ও আইডব্লিওএমডি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইআইটির মহাপরিচালক ও আইডব্লিওএমডি-২০২৫-এর সহ-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ।
এ আয়োজনের লক্ষ্য হলো সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রভাবশালীদের একত্রিতকরণ, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা, শান্তি ও সম্প্রীতির অনুকূল পরিবেশ নির্মাণে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং সরাসরি বাংলাদেশের সম্প্রদায়গুলিকে এমন প্রকল্পে জড়িত করা। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহযোগিতার ঐতিহাসিক-ঐতিহ্যের প্রকৃত বার্তা আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে।
দেশি-বিদেশি বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সৌহার্দ্যের সঙ্গে এদেশে বসবাস করে। এ দেশের মানুষ ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অধিকারে বৈষম্য বা বিভাজন করে না। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা রয়েছে।
আলোচকরা বলেন, সব নাগরিকের সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঐক্য ও শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে। ধর্মপালন, ধর্মচর্চা ও প্রচারের অধিকার যেখানে রয়েছে সেখানে সব ধর্মের মানুষের মধ্যেই অকৃত্রিম সম্পর্ক বিরাজ করে। আর অর্থপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমেই বাস্তবে আন্তঃধর্মীয় কিংবা বহুধর্মীয় সম্প্রীতি গড়ে তোলা সম্ভব। কোনো সত্যিকারের ধার্মিক অন্য ধর্মের ঐতিহ্যের অনন্য ধর্মতাত্ত্বিক পরিচয়কে অসম্মান করে না। শান্তিময় সমাজ নিশ্চিত করতে প্রতিটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকেই সহানুভূতিশীল ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধসম্পন্ন হতে হবে। বিভিন্ন ঐতিহ্যের ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমেই একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাল্টি-ফেইথ নেইবারস নেটওয়ার্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা ড. বব রবার্টস জুনিয়র, ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার (আইএসএনএ) চেয়ারম্যান ইমাম মোহাম্মদ মাজিদ। অনুষ্ঠানে মুসলিমদের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী, হিন্দুদের পক্ষ থেকে শ্রীমত স্বামী অম্বেশানন্দ, খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে আরচ বিশপ বিজয় দে, বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন- আইআরএফ সেক্রেটারিয়েটের প্রেসিডেন্ট নাদিন মায়েনজা, ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল এনগেজমেন্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস চেন, গ্লোবাল মুসলিম অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র অ্যাডভাইজার সাইয়েদ মুক্তাদির এবং ঢাবির বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবু সায়েম। অনুষ্ঠানে ধর্মতত্ত্ব এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মীয় শতাধিক নেতারা সহ গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক মাল্টি-ফেইথ নেইবারস নেটওয়ার্ক (এমএফএনএন) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টার-রিলিজিয়াস অ্যান্ড ইন্টার-কালচারাল ডায়লগ (সিআইআইডি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটেড থটের (এআইআইটি) সহযোগিতায় এই সম্মেলনটি হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠানের সমাপনী টানা হবে। এতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এ এফ এম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি এবং ঢাবির প্রোভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।