ইবিতে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আহত ১৭

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৯ পিএম

বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে আইন ও আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপস্থিত শিক্ষক এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৭ জন আহত হন।
রোববার বেলা ১১টায় প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে শাখা ছাত্রদল শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।
এদিকে শনিবার রাতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর আল-ফিকহ্ বিভাগ ও অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা অতর্কিত ও পরিকল্পিতভাবে হামলা করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
তবে আল-ফিকহের শিক্ষার্থীদের দাবি- আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কুষ্টিয়া থেকে আসা ডাবল ডেকার বাসে আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ৩ শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে থাকা অন্য দুজনের জন্য জ্যাকেট দিয়ে সিট ধরে। পরে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমন অভ্র তাদের জ্যাকেট সরিয়ে ওই সিটে বসে। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে আল-ফিকহের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিহাব ও রাকিব কথা বলতে গেলে সুমন রাকিবের শার্টের কলার ধরে। এতে তাদের মাঝে হাতাহাতিতে সুমনের মুখে আঘাত লাগে। পরে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৮টায় ক্যাম্পাস গেটে বাস আটকায়। তখন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয়পক্ষের শিক্ষকদের নিয়ে রাত ১০টায় প্রক্টর অফিসে আলোচনায় বসেন।
আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১১টায় প্রক্টর উভয়পক্ষের সমঝোতার বিষয়টি জানালে হঠাৎই উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
প্রক্টরকে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী ধাক্কা দিয়েছে বলে আল-ফিকহের শিক্ষার্থীরা দাবি করলে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি আরম্ভ হয়। পরে ঝাল চত্বরে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি হয়। এতে আইন বিভাগের অন্তত ৮ জন ও আল-ফিকহ্ বিভাগের অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় মারামারি থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং দুইজন নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও আহত হন।
এদিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, রোববার রাতে আল-ফিকহ্ ও অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা তাদের উপর অতর্কিত ও পরিকল্পিতভাবে হামলা করেন। তারা বঙ্গবন্ধু হলের জাকারিয়া, জিয়া হলের আমিনুর ও লালন শাহ হলের হাসানুল বান্নাকে এ হামলায় সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা হিসেবে দাবি করেন। এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন তারা। তারা মারধর ও আক্রমণের তদন্ত ও বিচার, বাস ভাঙচুরের সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জড়িত নয় এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিসহ চার দফা দাবি জানান।
অপরদিকে আল-ফিকহের শিক্ষার্থীদের দাবি- প্রথমে আইনের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্ত্রাসী বললে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হলে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।
নিরাপত্তা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জনি বলেন, প্রক্টর স্যারের অফিসে আলোচনায় সমাধানের পর আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিচার না মেনে হট্টগোল শুরু করে। এ সময় আমরা তাদের থামাতে গেলে প্রক্টর স্যারসহ আমাদেরকে লাঞ্ছিত করেন তারা। পরে উপস্থিত সবাই আমাদেরকে লাঞ্ছিতকারীদের ধাওয়া করে। পরে আমরা তাদের নিবৃত করি।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, শনিবার দুপুরে উভয় বিভাগের শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে ডিন অফিসে বসেছিলেন। এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও ছাত্র উপদেষ্টার সভা চলমান রয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।