শহিদ নজির আহমদ দিবস পালনের আহ্বান বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১৯ পিএম
![শহিদ নজির আহমদ দিবস পালনের আহ্বান বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/01/Biplobi-opy-679e499707b67.jpg)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শহিদ নজির আহমদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহিদ নজির আহমদের ৮২তম শাহাদাত বার্ষিকী আগামীকাল রোববার। ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এ দিনে সাম্প্রাদায়িকরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে শহিদ নজিরকে হত্যা করে।
জুলাই বিপ্লবে
অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের মুসলিম জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ দিনটিকে
‘সাম্প্রাদায়িকতা বিরোধী শহিদ নজির আহমদ দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দিয়েছে।
এ উপলক্ষে রোববার
সকাল ৯টায় শহিদ নজিরের সমাধিস্থল আজিমপুর কবরস্থান জিয়ারত, পরে বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান এবং বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে
দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
শনিবার এক যৌথ
বিবৃতিতে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ ও সদস্য সচিব ফজলুর
রহমান এ ঘোষণা দেন বলে সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক
ইয়ামিন সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে
শহিদ নজির আহমদকে বিশ্ব মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম ‘আইকনিক ইসলামোফবিক ভিক্টিম’ আখ্যা
দেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক
আবদুল ওয়াহেদ ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমান।
তারা অভিযোগ
করেন, ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের মুসলমানদের ওপর হিন্দু জমিদার
ও পরবর্তীতে হিন্দুত্ববাদীদের সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাসকে গোপন করার মতলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রথম শহিদ নজির আহমদকে ইতিহাস থেকে পরিকল্পিতভাবে মুছে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে
তারা আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক হিন্দু ছাত্ররা শহিদ নজির আহমেদকে হত্যা করলেও ১৯৫২ সাল
পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজনে সাধারণ হিন্দু ছাত্ররা মুসলিম ছাত্রদের সঙ্গে
মিলে তার শাহদাত বার্ষিকী পালন করত। কিন্তু পরবর্তীতে গভীর চক্রান্তের বশবর্তী হয়ে,
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহিদ হওয়া সত্ত্বেও নজির আহমদের শাহাদাত বার্ষিকী পালন বন্ধ
করা হয়। এমনকি তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো স্থাপনার নামকরণও করা হয়নি।
চব্বিশের জুলাইয়ে
বৈষম্যবিরোধী বিপ্লব হয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে শহিদ
নজির আহমদের প্রতি বর্ণবাদী ইসলামোফোবিক বিদ্বেষের সিলসিলা বন্ধের আহ্বান জানান বিপ্লবী
ছাত্র পরিষদ আহবায়ক আবদুল ওয়াহেদ ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমান।
এদিকে সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে শহিদ নজির আহমেদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে বলা হয়, মহান শহিদ নজির ঔপনিবেশিক
জমানায় তৎকালীন নোয়াখালী জেলার (বর্তমানে ফেনী)
আলিপুর গ্রামের একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু সেই সময়েও দারিদ্র্যকে
জয় করে তিনি পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৩৭ সালে মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৩৯ সালে ফেনী কলেজ
থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪২ সালে কৃতিত্বের
সঙ্গে সম্মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এমএ অধ্যয়নকালে
তিনি শহাদাত বরণ করেন।
শহিদ নজির আহমদ
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রনেতা ছিলেন। বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিটিশ
উপনিবেশ থেকে স্বাধীন করতে পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি
মুসলিম ছাত্র পরিষদের নেতা ছিলেন। তিনি অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ও অধ্যাপক সৈয়দ সাজ্জাদ
হোসায়েন সম্পাদিত পাক্ষিক ‘পাকিস্তান’ পত্রিকার ম্যানেজার ছিলেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
উল্লেখ করা হয়।
এতে শাহাদাতের
বর্ণনায় বলা হয়, ১৯৪৩ সালের জানুয়ারির শেষদিকে মুসলিম ও হিন্দু ছাত্রীদের একটি যৌথ
অনুষ্ঠানে ‘বন্দে মাতরম’ গাওয়া এবং পূজার্চনা বিধির বিরুদ্ধে মুসলিম শিক্ষার্থীরা
আপত্তি জানায়। এর প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে
(বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরাতন ভবন) ক্লাস চলাকালীন মুসলমান ছাত্রদের ওপর সাম্প্রদায়িক
হিন্দু ছাত্ররা হামলা চালায়। ওই সময় সুপরিচিত মুসলিম ছাত্র নেতা শহিদ নজিরকে বেধড়ক
পেটানোর পাশাপাশি উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। সতীর্থরা তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি
করলেও ক্ষতবিক্ষত শরীর থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় মাগরিবের সময় তিনি শাহাদাত বরণ
করেন। তখন বাংলা বিভাগের শিক্ষক পল্লীকবি জসীম
উদ্দীন তার শিয়রে উপস্থিত ছিলেন। শাহাদাতের সময়
১৯৪৩ সালে তার এমএ পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই তিনি শাহাদাত বরণ
করেন।