মাকে খুশি করতেই ছাত্র না হয়েও রাবিতে ৪ মাস ক্লাশ করেন নাভিক
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম
মাকে খুশি করতেই ছাত্র না হয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পরিচয় গোপন করে চার মাস আইন বিভাগে ক্লাশসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন নাভিক রহমান। তাকে ভুয়া শিক্ষার্থী হিসেবে আটক করা হয়েছে।
পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাকে আদালতে চালান দেওয়ার পর আদালত থেকে তাকে কারাগারে প্রেরণ করে।
শনিবার আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তারা বিভাগের সভাপতিকে জানান বিষয়টি।
নাভিক রহমান ছদ্মবেশে আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাশ করছিলেন এতদিন। পাশাপাশি খেলাধুলা ও জাতীয় দিবস উদযাপনসহ বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রক্টর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভুয়া ওই শিক্ষার্থীর মায়ের অনেক আশা ছিল ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে; কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এতদিন।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, নাভিক আইন বিভাগের ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী পরিচয় ব্যবহার করেন। পরে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তখন ভুয়া পরিচয় বের হয়। তার গার্ডিয়ান হিসেবে যাদের ডেকেছিল, তারাও ভুয়া পরিচয় দিয়েছে।
এরপর বিভাগের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রক্টর অফিস থেকে নাভিক ও তার ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। গত চার মাসে বিভাগের সব ধরনের প্রোগ্রামে তার উপস্থিতি ছিল বলে জানা যায়।
নাভিক রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা যায়, বায়োতে নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটা টি-শার্ট পরিহিত ছবি রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। তার ফ্রেন্ডলিস্টেও আইন বিভাগের অনেকে যুক্ত রয়েছেন।
আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের ২০২৩-২৪ সেশনের শ্রেণি প্রতিনিধি (সিআর) মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের ক্লাশ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে ১ মাস রোল কল করা হতো না। ওই সময় নাভিককে নিয়মিত ক্লাশ করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেত না। তবে বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করতেন নিয়মিত। আমাদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি যে, তার নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।
সার্বিক বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাঈদা আঞ্জু বলেন, শনিবার রাতে আইন বিভাগের ভুয়া পরিচয় দেওয়ায় ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকদের আটক করা হয়েছে। আটকের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না, তবে আজ প্রক্টর স্যারের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলে জেনেছি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ছেলেটি স্বীকার করেছে যে, তার মায়ের অনেক আশা ছিল তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে; কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি। তাই মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছেন এতদিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার ওসি মো. আব্দুল মালেক মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, আইন বিভাগের ভুয়া পরিচয় দেওয়ায় এবং তার আচরণ সন্দেহ হওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে। পরে তাকে রোববার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।