রাবিতে বাস্কেটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৩

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাস্কেটবল খেলাকে কেন্দ্র করে আইন ও ভূমি প্রশাসন এবং গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মো. হৃদয়, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী ও ফোকলোর বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের বর্তমান সদস্য রিমন আহম্মেদ। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার রাত ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রাফি, আকাশ, আতিক, তানভীন, আপন, সাব্বির প্রমুখ। তারা ওই বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যায় আন্ত:বিভাগ বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয় আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ এবং গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ। এতে গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ জয় লাভ করে। খেলার শেষের দিকে গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের দর্শকদের মাঠে প্রবেশ ও উল্লাসকে কেন্দ্র দলের সিনিয়র খেলোয়াড় পুলকের সঙ্গে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরবর্তীতে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় খেলা শেষ হয়।
খেলায় ঝামেলার জেরে রাত ১০টায় আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ শিক্ষার্থী লাঠিসোঁঠা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে পুলক আহমেদকে মারধর করে। ওই সময় পুলকের সঙ্গে থাকা মো. হৃদয়, রিমন আহম্মেদ ও মেহেদী হাসান এত আহত হন। পরবর্তীতে হামলায় আহতদের বন্ধুবান্ধব ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেন। এ সময় তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল মিঠু, কর্মী ফয়জুল ইসলাম অমিসহ বেশকয়েকজন নেতা-কর্মীকে দেখা গেছে। একপর্যায়ে তারা প্রশাসন ভবনের পাশে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুর রাজ্জাক সৈকতকে পেয়ে মারধর করে আটক করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে প্রক্টর দপ্তরে ভুক্তভোগীদের দাবির প্রেক্ষিতে আটক শিক্ষার্থী ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িতদের বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়।
আহত রিমন আহম্মেদ বলেন, রাবি ক্রিকেট টিমের চার থেকে পাঁচ জনসহ বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি সূত্র এসে জানায় পুলককে মারা হবে। আমরা ছোটখাটো একটা বিষয় ভেবে তাদের সঙ্গে কথা বলে ম্যানেজ করবো বলে মনস্থির করি। ইতোমধ্যে পেছন ও সামনে থেকে ২০ জন কোনো কথা ছাড়া আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কে রে, কে রে বলে তারা লাঠি ও রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আমিসহ সেখানে থাকা পাঁচ থেকে ছয়জনকে মারধর করে তারা পালিয়ে যায় তারা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাহাল উদ্দিন ভুক্তভোগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনি অনুতপ্ত। এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শাস্তির সুপারিশ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, খেলা শেষে আর যেন কোনো ঝামেলা না হয় সেজন্য আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পরিবহন মার্কেটে হামলা চালায়। আটক শিক্ষার্থী ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করতে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের একাডেমিক কমিটির একটি জরুরি সভা হবে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।