Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

বাকৃবিতে ফিরেছে গেস্টরুম সংস্কৃতি

Icon

বাকৃবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৫ পিএম

বাকৃবিতে ফিরেছে গেস্টরুম সংস্কৃতি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ফের শুরু হয়েছে গেস্টরুম কালচার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে শিক্ষার্থীদের হলের তথাকথিত আদব-কায়দা শেখানোর অজুহাতে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি তাদের হাতে হল ভেদে ২০ থেকে ৫০টি নিয়ম পালনের ফর্দও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোহরাওয়ার্দী হলের ১ম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শনিবার রাত ৯টায় হলের রিডিং রুমে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে ডাকা হয়। আমাদের সবার মোবাইল রুমে রেখে আসতে বলা হয় এবং গেস্টরুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই কারোর কাছে মোবাইল আছে কি না নিশ্চিত হতে তল্লাশি করা হয়। 

এরপরে ২য় বর্ষের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী হলের অবশ্য পালনীয় কিছু উদ্ভট নিয়ম (সাইকেল চালানো যাবে না, ২য় তলায় যাওয়া যাবে না, বড় ভাইদের সঙ্গে দিনে যতবার দেখা হবে ততবার সালাম, পরিচয় ও হ্যান্ডশেইক করতে হবে, হলে লুঙ্গি পরা যাবে না, গ্রন্থাগারে ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া যাবে না, ক্যান্টিনে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি) আমাদেরকে জানান। 

এরপরে ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া জানতে চান। আমরা তাদেরকে আমাদের হলভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যার কথা জানাই। এরপরে ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা চলে গেলে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। আমরা বড় ভাইদের কাছে আমাদের সমস্যাগুলো বলেছি এটিই ছিল আমাদের অপরাধ। 

এরপরে ছোটখাটো ভুল উল্লেখ করে (হাত বাঁকা রেখে দাঁড়ানো, হাত সামনে রেখে দাঁড়ানো, মাথা উঁচু বা নিচু করে রাখা ইত্যাদি) আমাদেরকে একজন একজন করে ডেকে ডেকে গালাগাল করা হয় এবং বিভিন্ন উদ্ভট শাস্তি দেওয়া হয় (১০ রকমের হাসি, ১০ রকমের সালাম, গাছে ঝুলে থাকার অভিনয় করা, নাচ করা ইত্যাদি)। 

এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে ১ম বর্ষের একজন মাথা ঘুরে পড়েও যায়। পরে তাকে হলের মধ্যেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাদের গেস্টরুম শেষ হয়।’

আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, গেস্টরুম চলাকালীন ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে বলেছেন এ নিয়ে হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে নালিশ জানিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারণ, হলের প্রাধ্যক্ষের কথামাফিক গেস্টরুম করানো হচ্ছে। সিনিয়ররা বিগত ১ বছর গেস্টরুম অনাচার সহ্য করেছেন, এখন নবীনদেরকেও একই নিয়মে তা সহ্য করতে হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাত সাড়ে দশটার দিকে ফজলুল হক হলের কমনরুম থেকে এক শিক্ষার্থীকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিল। ওই শিক্ষার্থীকে দেখে মনে হচ্ছিল কমনরুমে দীর্ঘক্ষণ থাকায় শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।’

এর দুইদিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলেও ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডেকে গেস্টরুম করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তাদেরকেও হলের অদ্ভুত কিছু নিয়মের ফর্দ দেওয়া হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। কিন্তু পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সেই নিয়ম আর মানতে হবে না বলে জানানো হয়।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, ‘হলের নবীনবরণের দিন আমি নবীনসহ বাকি শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দিয়েছি যে, হলে কোনো গেস্টরুম অনাচার চলবে না। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এতবড় ঘটনার ব্যাপারে তারা কেউই এখনও আমার সঙ্গে কথা বলেনি। আমি আজই তাদের সঙ্গে বসব এবং এর সঙ্গে জড়িতদের খোঁজার চেষ্টা করব।’

প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমি নিজেও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি যে বিভিন্ন হলে গেস্টরুম করানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশ আছে যে, কোনো হলে কোনো ধরনের গেস্টরুম বা নির্যাতন চলবে না। প্রোক্টরিয়াল টিম ইতোমধ্যেই ঘটনার তদন্তে নেমেছে। এতে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম