কমেন্টের জেরে মামলা
মায়ের জানাজাতেও আসতে পারেননি শেকৃবির শিক্ষক
শেকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম
এক কমেন্টের জেরে ১০ বছর দেশছাড়া, শতভাগ বেতন বন্ধ, যাচাই-বাছাই ছাড়াই করা হয় বহিষ্কার, করা হয় থানায় সাইবার ক্রাইমের মামলাও- এমনকি মায়ের মৃত্যুতেও দেশে আসতে পারেননি তিনি।
বলছিলাম গত ১০ বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়া শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আরফান আলীর কথা।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের দ্বারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারী হেনস্তার শিকার হন। যার প্রতিবাদে অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন সেই সময়ের শেকৃবির এক শিক্ষার্থী। সেই পোস্টেই কমেন্ট করেছিলেন শেকৃবি শিক্ষক মো. আরফান আলী। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ছাত্রলীগের কর্মীরা তার সেই কমেন্টের স্ক্রিনশর্ট নিয়ে তা এডিট করে ক্যাম্পাসজুড়ে ভুল প্রচারণা চালিয়েছিলেন বলে দাবি সেই শিক্ষকের।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই সময়ের শেকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হক ও সেক্রেটারি দেবাশীষ দাসের নেতৃত্বে মধ্যরাতেই মিছিল হয় ক্যাম্পাসে। সেই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সেই সময়ের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মানস কীর্তিনিয়া নয়ন, টুটন কুমার সাহা, মীমসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মিছিল থেকে শিক্ষক মো. আরফান আলীর বহিষ্কার, তার ছাত্রত্ব বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। পরক্ষণেই কোনো যাচাই বাছাই ছাড়া তাদের সব দাবি মৌখিকভাবে মেনে নেওয়া হয় এবং তার বেতন বন্ধ করে দেয় শেকৃবি প্রশাসন; যা পরবর্তীতে জরুরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ের মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিকে সেই সময় শিক্ষক আরফান আলী শিক্ষাছুটিতে সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণার কাজে ছিলেন। তবে তার সেই শিক্ষাছুটিও বাতিল করে শেকৃবি প্রশাসন।
তাকে ফিরিয়ে আনতে পরপর দুইবার সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। যার একটি সরাসরি শেকৃবি থেকে কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন সত্যতা জানার পর সেই চিঠি উপেক্ষা করেই তাকে গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন।
এখানেই শেষ নয়, শিক্ষক আরফান আলীর নামে আগারগাঁও থানায় মামলাও করেছিল সেই সময়ের শেকৃবি প্রশাসন যেই মামালার বাদী ছিলেন শেকৃবি রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম। মামলার সাক্ষী ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবির, মো. ইলিয়াস, মো. ইব্রাহিম।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালে সেই মামলার নিষ্পত্তি হলে মো. আরফান আলী সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়। এরপর আবার আপিল করে শেকৃবির সদ্য সাবেক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. অলোক কুমার পাল। তবে তা খারিজ করে দেন আদালত ।
গত ২০২৩ সালের নভেম্বরে পুনরায় তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেও সরকার পতনের আগপর্যন্ত তার জয়েনিং অনুমোদন দেয়নি সেই সময়ের শেকৃবি প্রশাসন । তবে সরকার পতনের পর তিনি গত ১৯ অক্টোবর প্রফেসর পদে উন্নীত হয়েছেন এবং বর্তমানে তিনি শেকৃবির প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।