বাজারের উচ্ছিষ্ট খাচ্ছেন ইবির আবাসিক শিক্ষার্থীরা
সরকার মাসুম, ইবি
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে পচা-বাসি সবজি, মাছ এবং নিম্নমানের চালের ভাত খাওয়ানো হচ্ছে। খরচ বাঁচাতে ডাইনিং ম্যানেজাররা রাতের আঁধারে বাজার থেকে পোকা-ধরা, টাল-খাওয়া, অবিক্রীত সবজি বস্তায় ভরে নিয়ে আসেন। অভিযানে হলের ডাইনিংয়ের ফ্রিজে পচা-বাসি সবজি ও মাছ-মাংস মিললেও এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন ডাইনিং ম্যানেজাররা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ নিয়ে অনেকটা উদাসীন। ফলে প্রতিনিয়ত এসব খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি হলের অন্তত তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খাবার পরিবেশনের জন্য ক্যাম্পাসের পাশের শেখপাড়া বাজার থেকে সবজি, মাছ ও চাল কেনেন ডাইনিং ম্যানেজাররা। এক্ষেত্রে তাদের ক্রয় তালিকায় থাকে অতি নিম্নমানের শাকসবজি, মাছ ও চাল। টাটকা তরকারির দাম বেশি হওয়ায় নামমাত্র মূল্যে বাজারের ‘উচ্ছিষ্ট পণ্য’ কিনে নেন তারা। প্রতিদিন বেচাকেনা শেষে অবিক্রীত সবজিগুলো আলাদা করে বস্তায় ভরে রাখেন বিক্রেতারা। শিক্ষার্থী সমাগম কমলে গভীর রাতে বা সুবিধামতো সময়ে ডাইনিং ম্যানেজারদের প্রতিনিধিরা ভ্যানে করে এসব মালামাল নিয়ে আসেন। এসব সবজিই রান্না করে পরিবেশন করা হয় হলগুলোতে। শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হয়ে তিনবেলা সেই খাবারই খাচ্ছেন।
দীর্ঘদিন এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পর বিভিন্ন সময় কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যদের অভিযানে ডাইনিংয়ের হলের ফ্রিজে পচা-বাসি সবজি মিলেছে। সর্বশেষ বুধবারও সাদ্দাম হোসেন হলের ডাইনিংয়ে পচা সবজি পাওয়া গেছে। তবুও ডাইনিং ম্যানেজাররা এসব অভিযোগ স্বীকার করতে নারাজ।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী আল মাসুদ বলেন, হলের খাবার আমরা শুধু বেঁচে থাকার জন্য খাই। স্বাদ কিংবা পুষ্টি কোনো কিছুই নেই এ খাবারে। তবুও আমরা উপায় না পেয়ে এগুলোই খেয়েই বেঁচে আছি। এসব খাবার খেয়ে হলের অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এসব খাবার কোনোভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়। নিয়মিত এমন খাবার খেলে একজন শিক্ষার্থীর স্মৃতিশক্তি ক্রমশ কমতে থাকে। শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও চরমভাবে এর প্রভাব পড়ে। এছাড়া নিয়মিত ছোটখাটো সমস্যার পাশাপাশি একসময় জটিল রোগে রূপ নেয়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
শেখপাড়া বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিংয়ে বাজারের সবচেয়ে নিম্নমানের পণ্যগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। এগুলো টাটকা সবজি থেকে তিন-চার গুণ কম দামে পাওয়া যায়। এসব সবজি তখন আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না।
আরেক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, সব মালামালই ভালো-মন্দ দুই ধরনের থাকে। হলের জন্য সবসময় কম দামের নরমাল জিনিসগুলোই কেনা হয়। আধপচা-পোকাযুক্ত তরকারি বাছাই করে আলাদা করে হলের জন্য রেখে দেয় বিক্রেতারা। সাধারণ ক্রেতারা সেগুলো কখনোই কেনেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডাইনিং ম্যানেজার যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে আমরা যে ভর্তুকি পাই তাতে হল চালানো সম্ভব হয় না। কিছুটা সাশ্রয়ের জন্য কম দামের সবজি কিনতে হয়। সব হলেই কমবেশি এসব মালামাল নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি বাড়ালে খাবারের মান বাড়াতে আমাদের অসুবিধা নেই।
কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশের ইবি শাখার সভাপতি ত্বকি ওয়াসিফ বলেন, বারবার বলা সত্ত্বেও তাদের এই অনিয়ম অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেককে আরও কঠোর হতে হবে। প্রত্যেক হলে অনিয়মগুলো তালিকা করে খুব দ্রুতই প্রভোস্ট কাউন্সিলের সঙ্গে সিওয়াইবির পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি।
প্রভোস্ট কাউন্সিল সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবাসিক হলে এ ধরনের পণ্য না কিনতে ডাইনিং ম্যানেজারদের সতর্ক করা হবে। আমি হল প্রভোস্টদের নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন হলে মনিটরিং করব। আশা করছি, তারা ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কাজ করবে না।