আবাসিকতার আবেদনকারীকে হল প্রাধ্যক্ষ
‘তোমার বাবা এতদিন তোমাকে বাইরে রাখতে পেরেছে, আরও কিছুদিন পারবে’
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০১ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রহমাতুন্নেসা হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সিট বণ্টনে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে আবাসিকতার আবেদনকারী এক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ মার্কেটে সংবাদ সম্মেলনটি করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিদা নাসরিন কনক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাহমিদা কনক বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বরে আবাসিকতার জন্য হলে আবেদন আহবান করা হলে বিধি মেনে আবেদন করেন ও সাক্ষাৎকার দেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গ্রহণ করা হলে সিট বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা ও একাডেমিক ফলাফলসহ যেকোনো মানদণ্ডেই নিশ্চিতভাবেই সিট হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। উপরন্তু হল প্রাধ্যক্ষের মন্তব্য তাকে অপমানিত করেছে।
হলের সিট বণ্টন পদ্ধতি ও তার প্রতি হওয়া বৈষম্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নীতিমালার অনুযায়ী মেধা বিবেচনায় তার নম্বর হয় ৫০। এছাড়াও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সহ-শিক্ষা কাজের প্রমাণ হিসেবে একটি আন্তর্জাতিক ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সনদ আবেদনের সঙ্গে জমা দেন। নীতিমালা অনুসারে এক্ষেত্রে ৩ নম্বর পাবার কথা। অর্থাৎ আমার সর্বমোট স্কোর হয় ৩৯+৫০+৩=৯২; প্রকাশিত ফলাফল বিবেচনা করলে যা সর্বোচ্চ স্কোর হবার কথা। হলে ৮৪ নম্বর পেয়ে অন্যান্য বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা আসন পেলেও তাকে মেরিট লিস্টে দেখানো হয়নি।
হল প্রাধ্যক্ষে অসহযোগিতামূলক আচরণ তুলে ধরে কনক জানান, এ বিষয়ে হলে কথা বলতে ১০টায় হলে গিয়ে তিন ঘণ্টা অবস্থান করেও প্রাধ্যক্ষের দেখা পাননি তিনি। হলের অফিসে প্রাধ্যক্ষের যোগাযোগ নম্বর চাইলেও দেয়নি। পরে বিকাল ৫টায় তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়।
সিট বণ্টনে কম নম্বর নিয়ে জুনিয়র শিক্ষার্থীরা সিট পেলেও তিনি কেন পাননি জানতে চাইলে কোনো উত্তরের পরিবর্তে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘তুমি কি আগের প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছো?’ এর আগে আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পূর্বে আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়ে হলে সিটের জন্য সাদা কাগজে আবেদনপত্র দিতে গেলে তিনি ভুক্তভোগীর আবেদনপত্র ফিরিয়ে দেন এবং বলেন, ‘তোমাকে দেখে তো হতদরিদ্র মনে হয় না। তোমার বাবা এতদিন তোমাকে বাইরে রাখতে পেরেছে, আর কিছুদিন পারবে। তুমি একটু কষ্ট করে বাইরেই থাকো; আগে ৫টা জামা কিনলে এখন ২টা কিনবা।’
এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করা না হলে এবং স্বচ্ছতা প্রমাণিত না হলে সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রহমাতুন্নেসা হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসমাত আরা বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে সিটের বণ্টন করেছি। ওই শিক্ষার্থী আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দিয়েছেন এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। এগুলো সব আমাকে হয়রানির উদ্দেশে করা হচ্ছে।
আর্থিক অবস্থা ও পোশাক নিয়ে মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারের সময় শিক্ষার্থীদের অনেককেই এ কথাগুলো বলে তাদের অবস্থা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। হয়তো তাকেও বলেছিলাম। শিক্ষার্থীদের অপমানিত করার উদ্দেশে কিছু বলা হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন সিট বণ্টনের কোনো নিয়ম-কানুন ছিল না। একটা ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আসনগুলোকে নিয়ে বাণিজ্য করেছে। এখানে একটা ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে ভুলত্রুটি থাকলে সমাধান করা যাবে। এখন যারা সংবাদ সম্মেলন করছে এগুলো মোটেও ভালো নয়। যখন এ সিট বাণিজ্যগুলো হতো তখন তো এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন দেখিনি। পরবর্তীতে যেন আর কেউ কখনো সিট বিক্রি না করতে পারে সেই সিস্টেমে যাব। যারা এগুলো নিয়ে কথা বলতেছে আমরা বলব তারা ভালো কাজের বিরোধিতা করছে। এটা নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। কারণ আমরা একটা নিয়মের মধ্যে থাকতে চাই।