সেই শিক্ষকের কুশপুত্তলিকায় শিক্ষার্থীদের থুতু-জুতা নিক্ষেপ
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে হেনস্তা ও যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ এনে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের কুশপুতুল নিয়ে মিছিল শেষে তাতে থুতু ও জুতা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে দেন।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে প্রধান ফটক অবরোধ করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। পরে উপাচার্যের কাছে তারা লিখিতভাবে ২৭ দফা অভিযোগ করেন ও মৌখিকভাবে ঘটনার বর্ণনা করলে অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিতে মঙ্গলবার হাফিজুল ইসলামের ক্যাম্পাসে আসার কথা জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা এসব কর্মসূচি করেন। তবে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে ওই শিক্ষক সাক্ষাৎকার দিতে ক্যাম্পাসে আসেননি বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
ক্যাম্পাস সূত্রে, বিভাগটির শতাধিক শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টায় রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের সামনে থেকে হাফিজুল ইসলামের ছবি সম্বলিত কুশপুত্তলিকা নিয়ে মিছিল শুরু করেন। তারা পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে ফটকের সাথে কুশপুত্তলিকা ঝুলিয়ে তাতে জুতা ও থুতু নিক্ষেপ করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের স্থায়ী বরখাস্তের দাবি জানিয়ে ‘বহিষ্কার বহিষ্কার, হাফিজ বহিষ্কার’, ‘হাফিজ হটাও, ডিএস বাঁচাও’, ‘হাফিজের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাফিজুল ইসলাম শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের নষ্টা, পতিতা, বাজারের মেয়ে সম্বোধনসহ প্রকাশের অনুপযোগী বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ ও পোশাক নিয়ে বাজে মন্তব্য করতেন। ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করা, কথা না শুনলে মার্ক কম দেওয়া, মেয়েদের ব্যক্তিগত নাম্বারে কল দিয়ে বিরক্ত করা, ফেক আইডি দিয়ে বিভিন্ন ছাত্রীর সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথোপকথন করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে পেটানো ও ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
বিভাগটির শিক্ষার্থীরা বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে আমরা আমাদের অভিযোগগুলো জমা দিয়েছি। আমরা তাকে বিভাগ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হোক। তদন্ত কাজে তাকে ক্যাম্পাসে আসতে আমরা বাধা দিচ্ছি না। এটা আমরা আমাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার প্রত্যেকটি অপকর্মের প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তদন্তের মাধ্যমে তার এসব অভিযোগ অবশ্যই প্রমাণিত হবে। তাকে যদি আজীবনের জন্য বরখাস্ত করা না হয়, আমাদের আন্দোলন-কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলবে।
অভিযোগের বিষয়ে ওই শিক্ষকের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তফা আরীফ বলেন, অভিযোগ তদন্তে সোমবার আমরা কিছু শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। মঙ্গলবার বিভাগের শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত হাফিজুল ইসলামের আজ ক্যাম্পাসে আসার কথা থাকলেও তিনি নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ক্যাম্পাসে আসেননি। তার সাক্ষাৎকার কিভাবে নেওয়া যায় আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।