বিক্ষোভে জাবি শিক্ষার্থীরা
‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ পিএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত খুনি-দোসরদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা চারটায় ‘জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদ’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে জড়ো হতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
এসময় একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়কের দিকে যাওয়া হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, বিচার চাই বিচার চাই, ভাই হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, ‘জুলাই হত্যার খুনিরা বিভিন্নভাবে ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তাদের দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। যারা বহিরাগত এনে ক্যাম্পাসে হামলা চালাল, তাদের একজনও এখনো গ্রেফতার হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব তাদের গ্রেফতারের আওতায় আনতে হবে। তাদের নিরাপত্তার ও মানবাধিকারের কথা চিন্তা করে সরকারের উচিত তাদের আইনের আওতায় আনা। নাহলে গণপিটুনির মতো ঘটনাগুলো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গণপিটুনিতে নিহত শামীম মোল্লা তার জবানবন্দিতে ১৫ জুলাই হামলার ঘটনায় জড়িত একজন শিক্ষকের নাম বলে গেছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলেন, সাভার-আশুলিয়ায় যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের বিচার এখনো হয়নি। ক্যাম্পাসে গত ১৫ জুলাই যারা ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছিল তারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে সারাদেশে সব খুনিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী লীগের দোসররা যদি মনে করে আমরা ঘরে ঢুকে গেছি, তাহলে তারা ভুল ভাবছে। আমাদের গণঅভ্যুত্থান এখনো শেষ হয়নি।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ জুবায়ের শাবাব বলেন, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে চালানো গণহত্যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী যারা জড়িত ছিল তারা এখনো বাইরে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করছে। বিজয়ের ৬৮ দিন পরেও আমরা দেখছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের বিচারে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। শহিদ ও আহত ভাই-বোনদের রক্তের সঙ্গে আমরা কোনো ধরনের বেঈমানী সহ্য করব না। অনতিবিলম্বে খুনি ও দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
মহাসড়কে অবরোধ চলাকালে সাভার এলাকায় গুলিতে শহিদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের পিতা বুলবুল কবির জানান, পিতার ঘাড়ে সন্তানের লাশের থেকে কষ্টের আর কিছুই হতে পারে না। আন্দোলনে এক হাজারেরও বেশি মানুষ শহিদ হয়েছে। কিন্তু একমাস পেরিয়ে গেলেও তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। সাভারে অনেকে শহিদ হয়েছে। কিন্তু একজন আসামিও এখন পর্যন্ত ধরা হয় নাই।’
শহিদ শ্রাবন গাজীর পিতা মান্নান গাজী বলেন, ‘এই আন্দোলনে বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়ে হাজার হাজার মানুষ শহিদ হয়েছে। আমার ছেলে শ্রাবনও এই সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে শহিদ হয়েছে। আমার দাবি একটাই। এই সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
এদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও মহাসড়ক অবরোধ শেষে খুনি দোসরদের চিহ্নিত মামলা নিশ্চিতসহ ৩ দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।