Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

ছাত্রলীগ নেত্রীদের উদ্দেশে প্রাধ্যক্ষের অডিও ভাইরাল

তোমরা হলের মেয়েদের পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করেছ

Icon

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ পিএম

তোমরা হলের মেয়েদের পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করেছ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের আবাসিক ছাত্রলীগের নেত্রীদের মাথা মুন্ডু আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম। ওই শিক্ষার্থীদের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে থানায় দিয়ে চালান দেওয়ারও হুমকি দেন তিনি। এ সংক্রান্ত একটি অডিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

এতে ওই প্রাধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীদের করে উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতা আন্দোলন করেছে। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। তোমাদের তো অস্তিত্ব থাকার কথা না৷মাথা মুন্ডু আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ আমরা সবাইকে বলেছি ধৈর্য ধারণ করতে। সেদিন তোমাদের একটা সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরেও তোমরা যাও নি। এটা তোমরা আইন ভঙ্গ করেছে। প্রাধ্যক্ষের আদেশ অমান্য করেছো। তোমাদের হল থেকে বহিষ্কার করার জন্য সিম্পলি এই অভিযোগটাই যথেষ্ট। 

‘তোমরা জানো যে এর আগে কিছু ছেলেকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করা হতো, মামলা দেওয়া হতো,পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হতো, ক্রসফায়ারে দেওয়া হতো। তাদের দোষ ছিল একটাই তারা নামাজি। তাদের মুখে দাড়ি আছে। তাদের দোষ ছিল একটাই তারা টাকলুর উপরে প্যান্ট পরিধান করে। সেই দোষে যদি এত ভালো ভালো ছেলেগুলোকে মামলা দেওয়া হয়ে থাকে, তাদের ক্রসফায়ারে দেওয়া হয় তাহলে তোমাদেরকে সরাতে আমাদের কি লাগবে’। 

অডিওতে আরও শোনা যায়, ‘তোমাদের বিরুদ্ধে সিরিয়াস (গুরুতর) অভিযোগ আছে। তোমরা এই হলের মেয়েদের প্রস্টিটিউশনে (পতিতাবৃত্তি) বাধ্য করেছ। কে করেছ, কারা করেছো এসব পরের কথা। তোমরাই করেছো। ছাত্রলীগ করেছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলে ছাত্রী নিপীড়ক ও ছাত্রলীগের পদধারী নেত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন হল প্রাধ্যক্ষ। তবে যাদের আবাসিকতা আছে এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ নেই কিন্তু ছাত্রলীগের পদে আছেন তারা নির্দেশ অমান্য করে হলেই অবস্থান করেন। ফলে হলে একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে কয়েকজন হল প্রাধ্যক্ষসহ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন বঙ্গমাতা হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার।

আলোচনার এক পর্যায়ে অধ্যাপক জামিরুল ইসলামকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। তখন তিনি ওই ছাত্রীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ও হুমকি প্রদান করেন। তার এধরনের মন্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অভিভাবকসুলভ নয় বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও হল প্রাধ্যক্ষরা।

কথার প্রথম দিকে তিনি ছাত্রীদের উদ্ভূত পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি তাদেরকে এক মাসের জন্য হলের বাইরে থাকার অনুরোধও করেন। তবে এক পর্যায়ে তিনি উপস্থিত ছাত্রীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের সহযোগী হিসেবেও দাবি করেছেন।

অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম ছাত্রীদের হল ছাড়ার হুমকি দিয়ে আরও বলেন, ‘পুলিশ ফোর্স, সেনাবাহিনী সকল কিছু রেডি (প্রস্তুত) আছে। তোমরা যদি উল্টাপাল্টা কিছু করো তাহলে প্রত্যেকটা মেয়েকে এখান থেকে অ্যারেস্ট (গ্রেফতার) করে থানায় নিয়ে গিয়ে চালান দেওয়া হবে। সকল কিছু আমাদের কাছে আছে।’

যারা ছাত্রলীগের পদধারী তাদের প্রত্যেককেই চলে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়ে তিনি আরও বলেন,  ‘তুমি পোস্টেড ছিলা কি না, তুমি দরিদ্র, তোমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আজ তোমাদের মুখ থেকে এসব গান বের হচ্ছে। এসব কোনো গান চলবে না। যারা পোস্টেড (পদধারী) ছিলা তাদেরকে চলে যেতে হবে।’

ওই ছাত্রীদেরকে ধর্ষণের সহযোগী আখ্যা দিয়ে ওই প্রাধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘তোমরা জানো, এই আন্দোলন করতে গিয়ে কতগুলো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে তোমাদের কারণে? শুধু ৫ তারিখের (৫ই আগস্ট) আন্দোলনেই কতগুলো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে তোমরা জানো? এই ধর্ষণের সহযোগী কারা? তোমরা।’

ওই রেকর্ডে তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমি তোমাদের দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, তোমরা যারা এই পোস্টে আছো, পোস্টে ছিলা, নিপীড়নকারী, মাদক কারবারি, মেয়েদেরকে উত্তক্তকারী তোমরা দয়া করে এক মাসের জন্য হল থেকে চলে যাও। তোমাদের সকল ডকুমেন্টস আমাদের কাছে আছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘এ তো মারাত্মক কথা। একজন শিক্ষক কখনোই এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলতে পারেন না। কেউ যদি অভিযুক্ত হয়ে থাকে তাহলে সেটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কারো বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে এমন অভিযোগ করা সমীচীন নয়।

একজন হল প্রাধ্যক্ষের এ ধরনের মন্তব্যকে ‘শিক্ষকসূলভ নয়’ উল্লেখ করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এটি কোনো শিক্ষকসুলভ আচরণ কিংবা অভিভাবকসুলভ আচরণ নয়। এ ধরনের শব্দ প্রয়োগ সঠিক নয়। যদি কোনো প্রমাণ না থাকে তাহলে আমরা কাউকে এভাবে দোষারোপ করতে পারি না কিংবা অপবাদ দিতে পারি না।’

এক হলের প্রাধ্যক্ষ আরেক হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসন করা ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এক হল থেকে গিয়ে আরেক হলের শিক্ষার্থীদের শাসন করা ঠিক নয়। তবে কোনো হল প্রাধ্যক্ষ যদি কখনো সংকটে পরে তাহলে আমরা তার পাশে দাঁড়াতে পারি। তার মানে এই না যে আমরা এধরনের বাক্য প্রয়োগ করে তাকে আরও বড় ধরনের বিপদের দিকে ঠেলে দেবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমার কথা নয়, শিক্ষার্থীদের কথা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি এটা বলেছিলাম। ওই কথাটা আমি ইনফরম্যালি বলেছি। তবে এটা মোটেও ঠিক হয়নি। আমার রিকোয়েস্ট থাকবে, তোমরা এগুলো নিয়ে লিখো না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘যিনি এধরনের মন্তব্য করেছেন তার কাছে কোনো তথ্য প্রমাণ আছে কিনা সেটা একটা বিষয়। যদি থাকে তাহলে এক বিষয় আর না থাকলে অন্য বিষয়। তবে বিষয়টি আমি অবগত নই। আমি এ বিষয়টি দেখবো।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম