Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

ছাত্রলীগ নেতাকে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র, রাবি অধ্যাপককে অপসারণ দাবি

Icon

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম

ছাত্রলীগ নেতাকে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র, রাবি অধ্যাপককে অপসারণ দাবি

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ। ছবি: যুগান্তর

নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি, অর্থ আত্মসাৎ, ছাত্রলীগ নেতাকে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র প্রদান, বিভাগের বিভিন্ন  দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ওই বিভাগের কার্যালয়ে ৫ পৃষ্টার লিখিত অভিযোগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে এ দাবি জানান তারা।

অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত স্নাতক পর্যায়ের কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবে না এ মর্মে দাবি জানিয়ে বিভাগের সভাপতি বরাবর আরেকটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তার অপসারণের দাবিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে একটি ব্যানারও সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই অধ্যাপকের ব্যক্তিগত চেম্বারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিন দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো লিখিত অভিযোগপত্র ও সরেজমিনে এসব তথ্য জানা গেছে। অভিযোগপত্রের শেষে বেশকিছু প্রমাণাদি আছে। স্নাতক পর্যায়ের ২০৯ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৯২ জন শিক্ষার্থী তার অপসারণের দাবিতে অভিযোগপত্রের সংযুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।  

আদালত বললে শেখ হাসিনাকে দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ তার ফেসবুকে ‘যৌক্তিক’ আন্দোলনের বিপক্ষে একের পর এক বিভিন্ন উসকানিমূলক ও অনৈতিক ভাষায় পোস্ট দেন বলেও লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়; যা শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন দমনে সরকারের পৈশাচিক গণহত্যাকে সমর্থন করে এবং উসকে দেয়। 

এছাড়া একাডেমিক পরিসরে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ক্লাস না নেওয়া, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অপমান-অপদস্ত করা, পরীক্ষায় খাতায় অনৈতিক সুবিধা দেওয়া, হুমকি-ধমকি দেওয়া, অপছন্দের শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়াসহ তার নানা অপকর্মে ও অত্যাচারে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলেও লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিভাগের বিভিন্ন তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুসতাক আহমেদ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব (৫ মে ২০২১ থেকে ৪ মে ২০২৪) পালনের সময় বিভাগের বিভিন্ন তহবিল থেকে ৯ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 

তিনি বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব ছাড়ার পর তার এই অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে। বিষয়টি অবগত করে নতুন সভাপতি রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি এ টাকা বিভাগের তহবিলে জমা দেবেন মর্মে অঙ্গীকার করে বিষয়টি ফয়সালা করলেও এখনো সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেননি। 
অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেন বলেও অভিযোগপত্রে বলা হয়। এতে বলা হয়, ‘তিনি বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে রাতবিরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ) মেসেজ পাঠাতেন। যা সেই শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা এর বিবরণ এখানে দিচ্ছি না। প্রয়োজনে ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত।’

বিভাগের একাডেমিক সভার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে ভুয়া প্রত্যয়পত্র দেন। ওই প্রত্যয়পত্র দেখিয়ে আসাদুল্লা-হিল-গালিব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। 

ওই জালিয়াতির কথা উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘ছাত্রলীগ নেতা আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২ সেশনের স্বান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার আবেদন করেন। ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ভুয়া সনদে’ গালিব ওই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। 
এর প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিভাগের জরুরি সভায় ওই নেতার ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। তবে জরুরি সভার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সভাপতি মুসতাক আহমেদ ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে প্রত্যয়ণপত্র প্রদান করেন। তবে সেই দিনের তারিখের পরিবর্তে তিনি প্রত্যয়ণপত্রে ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট উল্লেখ করেন।’  
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রোববার সকালে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার বিষয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিল। আমি বরাবর বলে আসছি কোটা পদ্ধতিই ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি না। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতার ওপর বুলেটের আঘাতে হত্যা করা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। আমার স্ট্যাটাসে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছে। কোনো মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ভুল বোঝাবুঝি নিজেরা বসে সমাধান করা যায়। যারা বেদনাহত হয়েছেন মার্জনা করবেন।’

অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না নিতে পারার বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল (সাজ্জাদ বকুল) বলেন, আগামীকাল একাডেমিক কমিটির মিটিং রয়েছে।  সেখানে শিক্ষকদের মতামতের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. তারিকুল হাসান বলেন, এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্র পেয়েছি। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম