Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

বাকৃবিতে এক হল থেকেই ছাত্রলীগের ৭ লাখ টাকার সিট বাণিজ্যের অভিযোগ 

Icon

বাকৃবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৫ পিএম

বাকৃবিতে এক হল থেকেই ছাত্রলীগের ৭ লাখ টাকার সিট বাণিজ্যের অভিযোগ 

স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর মুখ খুলছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক ফজলুল হক হলের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগে সিট বাণিজ্যের কথা জানিয়েছেন। 

যারা লিখিতভাবে বিষয়গুলো নিয়ে মুখ খুলেছেন তাদের সবার টাকা হিসাব করে দেখা যায়- শুধু ফজলুল হক হলেই গত এক বছরে মোট ৭ লাখ ৮ হাজার টাকার সিটবাণিজ্য হয়েছে। সব হলের সবার তথ্য পেলে টাকার অঙ্ক আরও বড় হতো।

জানা যায়, ভয়ে কেউ কিছু বলতেন না। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের কাছে এক রকম জিম্মি হয়েই থাকতে হতো তাদের। স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর এখন মুখ খুলেছেন তারা। 

হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আয়ের প্রধান দুটি উৎস হলো-ডাইনিং এবং সিট বাণিজ্য। মূলত অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা মাস্টার্স করতে আসেন তাদের থেকেই নেওয়া হয় টাকা, দেওয়া হয় সিট। অনেক সময় হলের নেতাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দুইবারও টাকা দিয়ে হলে থাকতে হয়েছে। শুধু বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাকৃবির শিক্ষার্থীরা পরে হলে উঠতে চাইলে তাদের থেকেও নেওয়া হয়েছে টাকা। ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৮ হাজার টাকাও একজনের থেকে নেওয়া হয়েছে।  

লিখিত অভিযোগে সিট বাণিজ্যে জড়িতদের নাম উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। 

অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না পাওয়া শিক্ষার্থী শেখ মেহেদী রুমি জয়, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এএইচএম হেলালুজ্জামান (ডন), মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব, খান মোহাম্মদ হাসনাইন কবির, আরিফুল ইসলাম সাগর এবং মো. মজনু রানা। 

২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মহব্বত আলী জানান, প্রথমে আমি হলে উঠে গেস্ট রুমের অত্যাচারের কারণে হল থেকে চলে যাই। তারপর হলে উঠার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে বাধা দেয়। হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে টাকা ছাড়া হলে তুলতে অপারগতা জানান। এরপর ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগ নেতা হেলাল এবং রাকিবকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে হলে উঠি। আমার সঙ্গে যারা উঠেছে তারা ১০-১২ হাজার টাকা দিয়ে উঠেছে। 

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র, কেন আমাকে টাকা দিয়ে উঠতে হবে? আমি এর বিচার চাই।

২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী আকিবুল ইসলাম জানান, আমি প্রথমে হলে উঠলেও ছাত্রলীগের অত্যাচারের কারণে বাহিরে ৪ বছর থাকি। তারপর আর্থিক সমস্যার কারণে হলে উঠার চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে হলে উঠতে দেয়নি। এরপর আমি এইচএম হেলাল উদ্দিনকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে হলে উঠি। আমি একজন আবাসিক হলের ছাত্র হয়ে কেন টাকা দিতে হবে? আমি এর বিচার চাই। পরবর্তী কেউ যেন এ ধরনের সিস্টেমের শিকার না হয়, তার নিশ্চয়তা চাই।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন বলেন, প্রথম বর্ষের শুরুতে হলে উঠলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে হল ছেড়ে দিয়ে ২ বছরের জন্য বাইরে ছিলাম। কিন্তু আমার বাবা একজন গার্মেন্টস কর্মী তার পক্ষে হলের বাইরে থাকতে যে খরচ তা বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। এই প্রেক্ষিতে আমি বাকৃবি ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগ নেতা এএইচএম হেলালুজ্জামান ডন ও রাকিবুল ইসলাম আমার কাছ থেকে সর্বমোট ১২ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে হলে সিট দেন। পরিপূর্ণ আবাসিক হল হওয়া সত্ত্বেও আমাকে টাকা দিয়ে হলে উঠতে হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জার ও ন্যক্কারজনক। 

অভিযোগের বিষয়ে এএইচএম হেলালুজ্জামান বলেন, হলে যে সিট বাণিজ্যের বিষয়টি ছিল এটি সবারই জানা। এ বিষয়টি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তবে আমরা যারা হলের ছাত্রলীগ কর্মী ছিলাম তারা কেবল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যম ছিলাম। সিট বাণিজ্যের এই টাকা আমরা কেউই নিতাম না। আমরা কেবল মাধ্যম ছিলাম।

অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম সাগর বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। এসব অভিযোগ কারা দিচ্ছেন সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নাই। হলের সিটের জন্য টাকা নেওয়ার ব্যাপারে আমি অবগত নই। সিট বাণিজ্যের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। হয়ত ছাত্রলীগ পদধারী হওয়ার কারণে আমার নামে এসব অভিযোগ দিচ্ছেন তারা।

সিট বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে রাকিবুল ইসলাম বলেন, এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। সিট বাণিজ্যের সঙ্গে আমি কখনই যুক্ত ছিলাম না। আমি হলের একদম সিনিয়র প্রতিনিধি ছিলাম। সেই কারণে হয়ত কেউ মনের ক্ষোভ থেকে আমার নামটি দিয়েছেন। অভিযুক্ত অন্যদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম