ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মধ্যরাতে স্লোগান দিতে শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এ সময় রড, স্ট্যাম্প ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হলে প্রবেশ করে বিভিন্ন রুমে তল্লাশি চালান শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সোমবার দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিট থেকে ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত মাদার বখশ হলের প্রথম ব্লকের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অন্তত ৬টি কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ সময় হলে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল। 

এর আগে রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মাদার বখশ হলের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্লকের শিক্ষার্থীরা থালা বাজিয়ে বিভিন্ন স্লোগান শুরু করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা 'আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার', 'অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন' ইত্যাদি স্লোগান দেন৷ 

একপর্যায়ে ওই হলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা প্রবেশ করেন। তাদের বেশ কয়েকজনের হাতে সময় রড, স্ট্যাম্প ও লাঠিসোঁটা দেখা গেছে। এ সময় গালিবকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, 'ওই বাঘের বাচ্চারা চিল্লা, এখন চিল্লা'। পরে তারা ওই হলের প্রথম তলার তৃতীয় ব্লকে যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের কক্ষগুলোর দরজা লাগানো থাকলে তারা সেগুলো খুলতে বলেন। বেশকয়েকজন নেতা-কর্মীরা অশ্লীল গালিও দেন। শিক্ষার্থীরা দরজা না খুলতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাকাডাকি করে বলেন, এই আমি তোদের গালিব ভাই বলছি, একটু কথা বলবো, দরজা খোল। 

একটি কক্ষের দরজা খোলতে দেরি হওয়ায় সেই কক্ষে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢুকে দরজা লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে আঙুল তুলে কথা বলতে দেখা গেছে। তবে ওইসব কক্ষে তল্লাশি চালানো কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি এই প্রতিবেদক। 

এর পর হলে প্রবেশ করেন হল প্রাধ্যক্ষ মো. রুকনুজ্জামান, আবাসিক শিক্ষক আমিরুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রাধাক্ষের কক্ষে গিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে হল ত্যাগ করেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আসাদুল্লা-হিল-গালিব মুঠোফোনে বলেন, 'মধ্যরাতে মাদার বখশ হলের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্লকের শিক্ষার্থীরা থালা বাজিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে আমি ও আমার নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসি। এরপর কয়েকটি কক্ষের শিক্ষার্থীদের রুমে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাই এবং তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যেন হলের পরিবেশ অস্থিতিশীল করা না হয়।'

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মো. রুকনুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি হলে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে পেয়েছেন। তল্লাশি চালানোর মতো কিছু দেখতে পাননি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে যা যা করণীয় হল প্রশাসন তাই করবেন।

ছাত্রলীগের লাঠিসোঁটা নিয়ে তল্লাশির ব্যাপারে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সংক্ষুব্ধ একটা অংশ যদি অভিযোগ করেন তাহলে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি দেখবেন।