জাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সংস্কারের দাবিতে ফের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে পূর্বঘোষণা অনুসারে দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সেখানে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এসে অবরোধ করে তারা। অবরোধ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বলবত ছিল। গান, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতার মাধ্যমে শেষপর্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল অবরোধ কর্মসূচি। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে সরকারের জারি করা কোটা বাতিলের পরিপত্র হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার পর থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালসাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা ও সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া- এই চার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল।
অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকা থেকে সিএন্ডবি মোড় পর্যন্ত হেঁটে পাড়ি দিতে দেখা যায়। তবে এ সময় সময় জরুরি অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে সহযোগিতা করেছে শিক্ষার্থীরা।
ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা যাত্রী আকাশ আহমেদ বলেন, ভোগান্তি তো হচ্ছেই। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও যৌক্তিক। আমরা দেখেছি কোটার ফলে বিভিন্ন সময় অনেক মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সাময়িকভাবে ভোগান্তি হলেও এটা মেনে নিতে হচ্ছে।
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন কোনো অযৌক্তিক আন্দোলন নয়। বরং সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করে কোটা বহাল রাখাই অযৌক্তিক। বিপিএসসির বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। তাই আমাদের দাবি সব প্রকার অন্যায়, অনিয়ম ও বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে হবে। যতদিন না এসব দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি। সোমবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচতলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।