জবি ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু কাল
সাকেরুল ইসলাম, জবি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১১:০৮ এএম
জবি ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু কাল
একের পর এক বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, টেন্ডার বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে খোদ মেয়াদোত্তীর্ণ জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে তারা তদন্ত কাজ শুরু করবেন।
এর আগে শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। জবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্য নেতারা। তাদের দাবি, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের দুই সিনিয়র নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হলো।
কমিটির সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হীল বারী। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত করে ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন ফাঁসের মেসেঞ্জারের স্ক্রিন রেকর্ডের ভিডিওসহ সব তথ্যপ্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
মেসেঞ্জার রেকর্ডে দেখা যায়, জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন তার নিজের মেসেঞ্জার থেকে একজনকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহ করছেন। ওই উত্তরপত্রের অধিকাংশ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলে গেছে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি ইব্রাহিম ফরাজিকে সভাপতি ও এসএম আকতার হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জবি ছাত্রলীগের কমিটি হয়। এর পর থেকে ক্যাম্পাসের সব টেন্ডার শীর্ষ এই দুই নেতা নিয়ন্ত্রণে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জবি ছাত্রলীগের চলমান কমিটি গঠনের পর আড়াই বছরের টেন্ডারের নথি যুগান্তরের হাতে এসেছে।
এতে দেখা যায়, লাইসেন্স ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গভীর নলকূপের জন্য ৯ লাখ টাকার টেন্ডার, বাংলা বিভাগের সংস্কারের সাড়ে ৬ লাখ টাকার টেন্ডার, গণিত বিভাগের ইলেকট্রিক কাজের টেন্ডার, নাট্যকলা বিভাগের ভবনের ছাদের উপরে প্রায় ৩১ লাখ টাকার কাজের টেন্ডার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাবের সরঞ্জাম কেনার ৫৫ লাখ টাকার টেন্ডার, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ভবন সংস্কারে প্রায় ১৮ লাখ টাকার টেন্ডার, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ভবন সংস্কারে প্রায় ১৪ লাখ টাকাসহ বড় বড় কাজের টেন্ডার পেয়েছেন আকতারের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার কেএস করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কামরুল হোসেন।
অন্যদিকে ফরাজির ভাগের টেন্ডার হিসাবে প্রিন্স কেন্দীয় মসজিদ দ্বিতল করার জন্য ৫৭ লাখ টাকার টেন্ডার, দর্শন বিভাগের ভবন সংস্কারে প্রায় ২১ লাখ টাকার টেন্ডার, ২০২২, ২০২৩ ও ২২০৪ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডার ও ডাইরি মুদ্রণসহ বাঁধাইয়ের কাজের তিন বছরের টেন্ডার, ২০২২ সালে ছাত্রী হলে কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিন কেনার টেন্ডার, একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের পেপার সরবরাহের দুই লাখ ১৯ হাজার টাকার টেন্ডার, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সংস্কার ও ইলেকট্রিক কাজের টেন্ডার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের নামফলক ও বসার জন্য কংক্রিটের বেঞ্চ তৈরি কাজের টেন্ডার, সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসবাবপত্র মেরামতের টেন্ডার, ছাত্রী হলে গ্রিল লাগানোসহ বিভিন্ন কাজের দুটি টেন্ডারের কাজ করেছেন প্রিন্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সাখাওয়াত হোসেন প্রিন্স।
জবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পরাগ হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে যে-ই এ ধরনের অপরাধ করবে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠনকে কলুষিত করার ইজারা কাউকে দেওয়া হয়নি। আশা করি কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। প্রিন্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সাখাওয়াত হোসেন প্রিন্স বলেন, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বৈধ ছাত্রনেতা। কারও বিশেষ প্রভাবে আমি কাজ পাই না। ইজিবির মাধ্যমে আমি কাজ পাই। বর্তমানে রসায়ন বিভাগে আমার একটি কাজ চলমান আছে। অন্যের লাইসেন্স ভাড়া করে কাজ নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।
কেএস করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কামরুল হোসেনের কাছে অন্যের লাইসেন্স দিয়ে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সেটা সত্য নয়। তোমরা খোঁজ নিয়ে দেখো। আমি কেএস করপোরেশনের লাইসেন্স দিয়ে একটি কাজ করেছি। অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ ীয় কমিটির সহসভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, প্রত্যেকটি অভিযোগের বিষয়ে আমরা অবগত।