সূত্রাপুর ছাত্রলীগের সঙ্গে জবি ছাত্রলীগের মারামারি, হাসপাতালে ৪
জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ইনিস্টিটিউট হাসপাতাল। ছবি- সংগৃহীত
পূর্ব শত্রুতার জেরে সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার রাতে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ইনিস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে প্রথমে মারামারির সূত্রপাত ঘটে। এসময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের কর্মীরা রড, হাতুড়ি, ইট দিয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজীর কর্মী মেহেদী হাসান মিরাজসহ তার বন্ধুদের মারধর করে গুরুতর আহত করে। এরপর তাদের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ইনিস্টিটিউট হাসপাতালে নেওয়া হলে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের কয়েকজন হাসপাতালে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে আসেন।
এসময় খবর পেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি গ্রুপের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী রড, লাঠি, জিআই পাইপ নিয়ে এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সিয়াম ও ফয়সাল নামে দুজন গুরুতর আহত হন।
পরবর্তীতে জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে শোডাউন দিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের খুঁজতে থাকে। এতে জবি ছাত্রলীগের ১৩ ব্যাচের চয়ন, ১৫ ব্যাচের সিফাত উল্লাহ, পাভেল, ইবনে সিনা, রহিম, ১৭ ব্যাচের অপু ও রাজাসহ অনেকে নেতৃত্ব দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় একজনকে আটকও করা হয়। পরবর্তীতে রাতে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন খবর পেয়ে জবি ক্যাম্পাসে আসেন।
এ বিষয়ে আহত জবি ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মী ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, আমি পুরান ঢাকার স্থানীয়। গতকাল রাতে জগন্নাথের ৫-৬ জন ও পুরান ঢাকার আরও ৫-৬ জন বন্ধুরা মিলে সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার বন্ধু আকাশের (বাবু বাজারের ব্যবসায়ী) সঙ্গে পুরাতন শত্রুতার জেরে ৭-৮ জন হাতুড়ি, রড দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় আমার কয়েকজন বন্ধু মার খেয়ে দৌঁড়ে পালালে একা পেয়ে আমাকে ও আমার বন্ধু সাব্বিরকে (জুবিলি স্কুলের শিক্ষার্থী) মেরে গুরুতর আহত করে। এরপর আমাকে ন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওই গ্রুপের কয়েকজন হাসপাতালে আমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে আসে। তখন খবর পেয়ে ফরাজী ভাইয়ের গ্রুপের আমার বড় ভাইয়েরা আসে। তখন বিপক্ষ গ্রুপের সিয়াম ও ফয়সাল নামে দুজন মার খেয়েছে।
প্রতিপক্ষ গ্রুপের পরিচয় জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, তারা কেউ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রলীগের, আবার কেউ সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের নেতা আজিম। আর আজিম সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিল্লালের রাজনীতি করে।
জানা যায়, আলী আজিম খাঁন সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। পড়ালেখা করেছেন সোহরাওয়ার্দী কলেজে।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে শান্ত নামে মিরাজের একজনকে আটক করেছে সূত্রাপুর থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আজম খাঁন বলেন, সিয়ামকে মারতে জগন্নাথের ৩০-৪০ জন আসে। আর তারা ছিল মাত্র ৩-৪ জন। তাদের হামলায় সিয়াম ও ফয়সাল নামে দুজন আহত হয়। সিয়াম একটি কলেজে ও ফয়সাল লালবাগ কলেজে পড়ে। আমার সঙ্গে রাজনীতি করতো বলতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করে মাঝেমাঝে। এটা রাজনৈতিক ঘটনা না। বন্ধুদের মধ্যে হাতাহাতি।
এ ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী কলেজের কেউ জড়িত নয় দাবি করে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কলেজের কেউ এ ঘটনায় জড়িত নয়, বহিরাগতরা কলেজের নাম ভাঙিয়ে ঘটনা ঘটায়। সিয়াম বা ফয়সাল কলেজের কেউ না।
এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী বলেন, ঘটনার সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী জড়িত ছিল, অনেকে আহত হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নয়।
জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আক্তার হোসাইন বলেন, গতকালের (শনিবার) মারামারির ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। জগন্নাথের যে ছেলে মার খেয়েছে, সে ছাত্রলীগের কোনো পদে নাই, কর্মীও না৷
জবি প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনো মারামারি হয়নি। জেনেছি এ ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র যুক্ত ছিল। কোনো অপরাধকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্রয় দেয় না। পুলিশ প্রশাসন ঘটনা তদন্ত করছে। তারা ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল ইসলাম জানান, তুচ্ছ বিষয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থলে আসার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।