মানববন্ধনে অভিভাবকরা
নতুন কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের আসক্ত করছে ডিভাইসে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
সদ্য প্রণীত নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা মোবাইল, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ডিভাইসের ওপর মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চোখ ও শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এই কারিকুলামে ব্যয়ভার মেটাতে অভিভাবকরা হিমশিম খাচ্ছেন। এর প্রতিবাদ করায় চারজন অভিভাবককে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দিয়ে জেলে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সচেতন অভিভাবক সমাজ আয়োজিত ‘শিক্ষা নিয়ে পুতুল খেলা থামাও!’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকরা এসব কথা বলেন।
বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন লেখক ও গবেষক রাখাল রাহা, মানবাধিকার কর্মী সীমা দত্ত, অভিভাবক ডা. আরিফ মোর্শেদ খান, নাছির উদ্দিন বিশ্বাস প্রমুখ।
অভিভাবকরা বলেন, বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের ডিভাইসনির্ভর করে ফেলা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিতে অভিভাবকরা বাধ্য হচ্ছেন। অতিরিক্ত মোবাইল ও কম্পিউটার তাদের মারাত্মক আসক্তিতে পরিণত করেছে। অনেকে পর্নোগ্রাফিতেও আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের জিনিসপত্রগুলো আমদানিনির্ভর। চাইনিজ পণ্য ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা অচল! এ কারিকুলামের ব্যয়ভার বহন করা দেশের অধিকাংশ অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব নয়।
কারিকুলামের প্রণেতাদের অন্যতম ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সমালোচনা করে তারা বলেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ বছর লেখাপড়া করেছেন। সেখানকার মূল্যায়ন পদ্ধতি কী এমন? পৃথিবীর কোন দেশে এই পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতি রয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারাও অভিভাবকদের কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না। ইংলিশ মিডিয়াম কারিকুলামে তারা কেন হাত দেয়নি? কারণ, তাদের সন্তানরা অধিকাংশ বিদেশে এবং ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করে। তারা দেশের অফিসার হবে। আর সাধারণ মানুষের সন্তানদের কুলি, মজুর বানানোর জন্য এই কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রতিদিন নিত্যনতুন নির্দেশনা দেওয়া ও বাতিল করা, কিভাবে পরীক্ষা হবে এবং মূল্যায়ন হবে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও হযবরল নির্দেশনায় ছাত্র-শিক্ষকরা আজ অসহায়, অভিভাবকরা নিরুপায়, বিপন্ন।
তারা বলেন, পৃথিবীর মধ্যে আমাদের শিক্ষার মান একেবারে নিচে চলে গেছে। এমনকি যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে লাখ লাখ মানুষের রক্তদানের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, আজ সেই পাকিস্তানের চেয়েও আমাদের শিক্ষার মান অনেক নিচে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে! শিক্ষার মানের এই ধারাবাহিক পতনের পথ থেকে সরকারকে সরে আসতেই হবে। তার জন্য অবিলম্বে সমন্বিত একমুখী শিক্ষা কারিকুলামের নামে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার সাথে পুরোপুরি বেখাপ্পা ও ধ্বংসাÍক এই কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।