Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

‘বিনা দোষে’ জবির মসজিদের ইমামকে অব্যাহতি, ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

Icon

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১১:২১ পিএম

‘বিনা দোষে’ জবির মসজিদের ইমামকে অব্যাহতি, ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিন। ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। জবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই বিনা দোষে একজন ইমামকে অব্যাহতি দেওয়াটা ঠিক হয়নি। এছাড়া যে ছাত্রীকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত সেই ছাত্রী বলছেন, ইমামের কোনো দোষ নেই। তাহলে কেন তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। 

তবে পূর্বের একটি ঘটনার জের ধরেই ইমামকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। 

তারা জানান, ঘটনার সূত্রপাত গত ১৭ মার্চ থেকে। সেদিন জাতীয় শিশু দিবস এবং জবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুতে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই মাহফিলে মসজিদের মিম্বরের পাশে নারী-পুরুষ সবাইকে একসঙ্গে বসিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন উপাচার্য সাদেকা হালিম। এ সময় নারী-পুরুষ মসজিদে একসঙ্গে বসা ইসলাম ধর্মীয় বিধানের লঙ্ঘন জানিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন ইমাম। এ ঘটনার জের ধরেই ইমামকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের ধারণা। 

জবির কেন্দ্রীয় মসজিদে রাতে এক নারী শিক্ষার্থীকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়ার ঘটনার ১০ দিন পর দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিনকে নামাজ পড়ানো থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। 

মসজিদের ইমামের তো কোনো দোষ নেই: জবি ছাত্রী

তবে সেদিনের ঘটনার বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেছেন, মসজিদের ইমামের কোনো দোষ নেই। ইমাম খুব ভালো মানুষ, তিনি মসজিদে প্রবেশই করেননি।

মসজিদের মুয়াজ্জিন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মে শারীরিক অসুস্থতাবোধ করায় জবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী কেন্দ্রীয় মসজিদের নারী শিক্ষার্থীদের নামাজের স্থানে ঘুমিয়ে পড়েন। মসজিদের মুয়াজ্জিন তালা লাগাতে গেলে ওই ছাত্রীকে দেখতে পান। তখন তিনি ইমামকে বিষয়টি জানান। ওই সময় দায়িত্বে থাকা দুজন পাহারাদার তাকে বের করে নিয়ে আসেন। ইমাম বা পাহারাদার কেউই ভেতরে ঢোকেননি। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে ইমাম এসে পৌঁছান এবং তিনি প্রক্টরকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। 

ওই শিক্ষার্থী তখন ইমামকে জানান, তিনি জবির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক ছাত্রী। ইমাম তখন হলের হাউস টিউটর সাজিয়া আফরিনের সঙ্গে ওই ছাত্রীকে কথা বলিয়ে দেন এবং তাকে হলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে ইমামকে মৌখিক অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ওই ছাত্রী যুগান্তরকে বলেন, সেদিন রাতে আমি এশার নামাজের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘুম ভাঙে৷ লাইট অফ থাকায় ডাকাডাকি করি। এর মধ্যেই দুজন পাহারাদার আসেন। তাদের কাছে বলি, নামাজের মধ্যে কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম বুঝতে পারিনি। পাহারাদাররা আমাকে বের করেন। একটু পর ইমাম আসেন। তিনি প্রক্টরকে ফোন দেন। আমিও তার সঙ্গে কথা বলি। এরপর হাউস টিউটরের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। উনি আমাকে হলে চলে আসতে বলেন। এতে ইমামের তো কোনো দোষ নেই। উনি খুব ভালো মানুষ। তিনি মসজিদের ভেতর প্রবেশই করেননি।

এ বিষয়ে মসজিদের ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমার কাজ মসজিদে নামাজ পড়ানো। কোথায় কে ঘুমিয়ে রয়েছে, সেটা দেখা আমার দায়িত্ব না। তাই নামাজ পড়িয়ে বাসায় চলে এসেছি। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুয়াজ্জিন ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান আমাকে। এরপর মসজিদের ভেতরে একজন মেয়ে শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন জেনেই আমি প্রক্টরকে ঘটনাটি জানাই। আমি এসে প্রক্টরের সঙ্গে ওই ছাত্রীকে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিই। ওই ছাত্রী তখন বলেন, তিনি একা ছাত্রী হলে চলে যেতে পারবেন। এরপর তিনি হলে চলে যান। এর ১০ দিন পর গতকাল (সোমবার) শুনি আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছে। 

দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ছাত্রী হলের হাউস টিউটর সাজিয়া আফরিন সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘হ্যাঁ, সে (ছাত্রী) আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমাকে ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি বলে। তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, সে হলে নতুন হওয়ায় ভয় পাচ্ছিল। পরে আমি তাকে হলে ফেরার ব্যবস্থা করে দিই। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে হলে দিয়ে আসেন।’ 

ওই ছাত্রী তখন অসুস্থ ছিল। তাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেছিল কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, ‘না, সে কোনো অভিযোগ দেয়নি’। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি তো ইমাম বা ওই ছাত্রীর দোষ দিচ্ছি না। বিষয়টা হলো- মসজিদে একটা মেয়ে ঘুমাবে কিন্তু ইমাম জানবেন না, এটা তো হতে পারে না। এটা কি তার দায়িত্বে অবহেলা নয়! এজন্য তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নামাজ পড়ানো থেকে নিষেধ করা হয়েছে। 

এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. একেএম লুৎফর রহমান বলেন, আমি গতকাল (সোমবার) জানতে পারলাম আমাকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে দেখা হবে। তাই তদন্ত শেষ না হলে বিষয়টি নিয়ে বলা যাচ্ছে না। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম