প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাস কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০১৮, ০৪:১৫ পিএম
প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাস কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
কয়েক সপ্তাহ পর একটি ‘আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ধারণা’ বিষয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। সে প্রতিযোগিতায় কোন ‘আইডিয়া’ নিয়ে লড়াই করা যায়, কয়েক দিন ধরে সেটাই ভাবছেন মশিউর রহমান, মাহবুবুর রহমান এবং নাসির উদ্দিন।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এই তিন শিক্ষার্থীর ব্যস্ত সময় কাটছে এখন। একদিকে ক্লাস আর অন্যদিকে সামাজিক ব্যবসার একটি চমকপ্রদ ধারণা উপস্থাপন—দুটোর সমন্বয় করতে গিয়ে মোটামুটি হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
মশিউর বলছিলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষকেরা আমাদের তৈরি করছেন। যেন বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই পেশাজীবনের জন্য আমরা প্রস্তুত হতে পারি।’
গত বুধবার ঘুরে দেখছিলাম বনানীতে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে আমরা পা রাখি একটি ক্লাসরুমে।
অর্থনীতির কঠিন সব বিষয় পড়ছিলেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস শেষে কথা হয় শিক্ষার্থী তাসফিয়া ইসলাম, রাসেল খান ও আরিফ আবরারের সঙ্গে।
তাসফিয়া বলেন, ‘ক্লাসরুমে টিচাররা তাত্ত্বিক পড়াশোনার সঙ্গে বাস্তব উদাহরণ দিয়ে পড়ান। কখনো ইতিহাস আবার কখনো অলিম্পিক আর ফিফা বিশ্বকাপের ব্যবসায়িক দিক নিয়েও পড়ি আমরা।’
ক্যাম্পাসের আনাচকানাচে ঘুরতে ঘুরতে পা রাখি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাঘরে। সেখানে টেবিল টেনিস খেলায় ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী।
শুধু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই নন, কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গেও দেখা হলো এই ক্যাম্পাসে। সোমালিয়া থেকে এসেছেন সাঈদ মোহাম্মদ হারশি ও রামলা মুহাম্মদ পড়ছেন বিবিএতে।
রামলা বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাই। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। সেই দেশেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। এখানে হাতে-কলমে ব্যবহারিক অনেক কিছুই শিখতে পারছি।’
কথা হয় কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চীনা শিক্ষার্থী লিন্ডা লিওর সঙ্গে। আধো ইংরেজিতে জানালেন, ‘বাংলাদেশে পড়তে এসে অনেক কিছুই শিখছি। এখানকার বন্ধুরা বেশ সহায়তা করছে। এখন অনেক বন্ধু আমার।’
বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার মতো একটা সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠেছে এখানে। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে সেটাই মনে হলো। বিবিএর ছাত্রী মাহপারা লামিয়া জানালেন, নিয়মিত শিক্ষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অভিজ্ঞজনেরাও অতিথি হয়ে এখানে ক্লাস নিতে আসেন।
স্কুল অব বিজনেস, স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স—এই তিন স্কুলের অধীনে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন। ক্লাসের বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সূত্রে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও বন্ধুত্ব হয়ে যায় ঠিকই।
২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে তিনটি স্কুলের অধীনে আটটি প্রোগ্রামে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী পড়ছেন। শিক্ষকের সংখ্যা ৩০।
বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে কেমন চলছে পড়ালেখা জানালেন কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্র কবির হোসেন। টিচার খুব আগ্রহ নিয়ে হাতে-কলমে আমাদের শেখানোর চেষ্টা করেন।
হার্ডওয়্যার, ডেটাবেইস, অ্যালগরিদম অ্যানালাইসিস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকসসহ সময়োপযোগী সব বিষয় সম্পর্কেই আমরা জানতে চেষ্টা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাল, পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে বৃত্তির সুযোগ আছে। ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের।
এ ছাড়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে সাজানো হয়েছে পাঠ্যক্রম।
শিক্ষার্থীরা যেন ইন্টার্নির মাধ্যমে সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পায়, সে চেষ্টা থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষার্থীই এখানকার আটটি সংগঠনের সদস্য। বিজনেস ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, ল ক্লাবের মধ্য সংগঠনগুলো সারাবছর মাতিয়ে রাখে ক্যাম্পাস।