নিয়োগ ঠেকাতে তৎপর খুকৃবির রেজিস্ট্রার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক দুর্নীতিতে রেকর্ড গড়েও বহাল তবিয়তে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার (শাহজাহান)। এই ব্যক্তি বর্তমানে সাম্রাজ্য হারানোর আতঙ্কে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম বন্ধে নানা অপতৎপরতা শুরু করেছেন।
জানা যায়, মাজহারুলের পূর্ণাঙ্গ রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল পুরোপুরি অবৈধ। নানা শর্তের বেড়াজাল দিয়ে সাবেক দুর্নীতিবাজ উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রহমান খান এবং তার দোসর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মাজহারুল নিজেই স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিটি এমনভাবে দিয়েছিলেন, যাতে কেবল মাজহারুলের চাকরিই রেজিস্ট্রার পদে স্থায়ী হয়।
এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত মাত্র তিন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য সাক্ষাৎকারপত্র পান, যেখানে মাজহারুল বাদে বাকি দুজন ছিলেন তার সাবেক সহকর্মী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা এবং ডামি প্রার্থী।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে, গ্রেড ৩-এর কোনো পদে নিয়োগ পেতে কমপক্ষে ১৫ বছরের সরকারি ১ম শ্রেণির চাকরির অভিজ্ঞতা অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু মাজহারুল ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করেছিলেন। অভিজ্ঞতার বয়সসীমায় ব্যাপক ঘাটতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত অবৈধভাবে রেজিস্ট্রার হিসাবে মাজহারুলই নিয়োগ পান।
অভিযোগ রয়েছে, খন্দকার মাজহারুল খুকৃবিতে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ বাণিজ্যসহ অবৈধ নানা কার্যক্রম শুরু করেন। একপর্যায়ে বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। কমিশন তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়।
পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ৩ আগস্ট ৭৪ শিক্ষক ও ৮ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করার জন্য নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনকে। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনও বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪২৬ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনও বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪২৬ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করে, যা এখনও চলমান।
পরবর্তীতে, শাস্তি পাওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনঃমুল্যায়নের জন্য আবেদন করেন। পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পুনঃমুল্যায়ন কমিটি গঠন করে। পুনঃমুল্যায়ন কমিটি খুকৃবির নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে গত সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। দাখিল করা প্রতিবেদনটির ৬ নং সুপারিশে উল্লেখ আছে- শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রার অনিয়ম লক্ষ্য করা যায় এবং এতে রেজিস্ট্রারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে যা প্রকাশিত সংবাদ, বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ সূত্রে পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নির্ভর করে একজন সৎ ও দক্ষ রেজিস্ট্রারের ওপর। প্রশাসনকে গতিশীল করার জন্য বর্তমান রেজিস্ট্রারকে অন্যত্র বদলি করে সৎ ও অধিকতর দক্ষ রেজিস্ট্রার নিয়োগের সুপারিশ করা হলো। রহস্যময় কারণে আজও রেজিস্ট্রার মাজহারুলের বিষয়ে পুনঃমুল্যায়ন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: দুদকের নজরের আড়ালে খুকৃবির দুর্নীতির আরেক বরপুত্র রেজিস্ট্রার মাজহারুল
জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক, পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চতর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর থেকেই নিয়োগ বন্ধ করতে তৎপরতা শুরু করেন রেজিস্ট্রার মাজহারুল।
প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার (শাহজাহান) যুগান্তরকে বলেন, এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করছেন। আগামী মাসে এই আবেদন শেষ হবে। এরপর যাচাই-বাছাই করে প্রার্থীদের কার্ড পাঠানো হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।