Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

আতঙ্কস্থল হয়ে উঠেছে ইবির গণরুম

Icon

সরকার মাসুম, ইবি

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম

আতঙ্কস্থল হয়ে উঠেছে ইবির গণরুম

গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছরের ব্যবধানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি র‌্যাগিংয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এর বাইরেও প্রতিনিয়ত ছোট-বড় র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার বেশিভাগই ঘটছে হলের গণরুমগুলোতে।

এর মধ্যে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় হয়। অন্য ঘটনাগুলোতেও হয় ব্যাপক সমালোচনা। সম্প্রতি লালন শাহ হলের গণরুমে এক ছাত্রকে বিবস্ত্র করে র‌্যাগিং ও নির্যাতনের ঘটনায় ফের নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।

এসব ঘটনায় ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের কার্যকর তদারকি নিয়ে। একই সঙ্গে বারবার গণরুমে নির্যাতনের ঘটনায় নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে গণরুম। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্তরা নির্যাতন বা র‌্যাগিংয়ের জন্য গণরুমকে সেইফ-জোন হিসেবে বেছে নেয়। এছাড়া নবীন শিক্ষার্থীদের কথা অনুযায়ী চলতে বাধ্য করতেই সিনিয়ররা ক্যাম্পাসে সদ্য ভর্তি হওয়া জুনিয়রদের টার্গেট করে এসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়।

হল প্রশাসন গণরুমগুলোর সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করায় এসব গণরুমের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা। ফলে হলের সিটে থাকতে হলে নেতাদের কথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে না গণরুমের শিক্ষার্থীদের।

ছাত্রসংগঠন তাদের কর্মসূচিতে লোকবল বাড়াতে এসব কক্ষে থাকা নবীনদের ব্যবহার করে থাকে। বিনিময় হিসেবে সামনে থাকে হলে ‘সিঙ্গেল সিট’ (একক বেডে থাকার সুবিধা) প্রাপ্তির প্রলোভন। ফলে ‘বড় ভাই’রা যখন যা বলেন তা করতে প্রস্তুত থাকতে হয় নবীনদের। এর ব্যত্যয় হলেই শুরু হয় নির্যাতন।

আলোচিত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- ঘটনা চারটির তিনটিই ঘটে গণরুমে। এসব ঘটনায় নির্যাতনের ধরণও একইরকম। র‌্যাগিংয়ের নামে মারধর, বিবস্ত্রকরণ ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করানো হয় নবীনদের। নির্যাতনকারীরাও প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। নির্যাতনের পর বাইরে প্রকাশ করলে আরও অধিক নির্যাতনের হুমকি দেওয়া হয়। কোন ক্ষেত্রে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, গত বছরের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দুই দফায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্দেশে নবীন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে প্রথম বর্ষের চার ছাত্রী। এ ঘটনার আগে ভুক্তভোগী হলের অন্য কক্ষে থাকলেও নির্যাতনকারীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে গণরুমে এনে রাতভর নির্যাতন করে। একই সঙ্গে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের সময় অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে তার ভিডিও ধারণ করে রাখে নির্যাতনকারীরা। ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে ভিডিও ভাইরাল ও ভুক্তভোগীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় নির্যাতনকারীরা। এ ঘটনা উচ্চ আদালতে গড়ালে আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এ ঘটনায় আলোচনার মাঝেই ১৯ জুন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এক ছাত্র লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে একই কায়দায় রাতভর নির্যাতন, উলঙ্গ করে অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও নানা যৌনকর্ম অভিনয় করে দেখাতে বাধ্য করা হয়। এ ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগের চাপে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হয় ভুক্তভোগী।

২ সেপ্টেম্বর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে ওই বিভাগের ইমিডিয়েট পাঁচ শিক্ষার্থী র‌্যাগিংয়ের নামে কয়েক দফায় শারীরিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে নির্যাতিত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টার করে বহিষ্কার করা হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের। যেসব শিক্ষার্থীরা অনিয়ম করে হলে ওঠে তারা অধিকাংশ গরিব পরিবারের হওয়ায় আমরা মানবিক জায়গা থেকে তাদের হল থেকে নামিয়ে দিতে পারি না। আমরা হলে কার্যক্রম বাড়ানোর বিষয়ে প্রভোস্টদের নিয়ে বসব। এ ধরনের কোনো গণরুম না রাখার ব্যাপারে প্রভোস্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন যুগান্তরকে বলেন, আমরা র‌্যাগিং নিয়ে যথেষ্ট তৎপর। গণরুমগুলো নিয়ন্ত্রণহীণ অবস্থায় থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এগুলো হচ্ছে। এছাড়া র্যাগিং প্রতিরোধ সেলের কার্যক্রম বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমরা র‌্যাগিং নিয়ে শক্ত অবস্থানে আছি। শিক্ষার্থীদের নৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হতে হবে। ছাত্র নাম ধরে এসব অপরাধ করলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম