চারিদিকে কোকিলের কুহু কলতান। গাছে গাছে সাজ সাজ রব। প্রকৃতি যেন সেজেছে আজ বাসন্তী সাজে। সাজবেই না বা কেন! আজ তো বসন্ত। প্রতি বছর পলাশ আর শিমুল রাঙা বসন্তকে বেশ ঘটা করেই বরণ করে নেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ।
প্রতিবারের মতো এবারো বসন্তকে রাঙিয়ে তুলতে তারা আয়োজন করেছে ‘বসন্ত বরণ উৎসব-১৪৩০’।
মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে চলছে বসন্ত বরণ উপলক্ষে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অনুষদের প্রধান ফটক পেরুতেই দেখা হয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী জান্নাতুল আরেফিন আফ্রিদীর সঙ্গে।
তিনি জানান, এবারের বসন্ত আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে অনুষদের ‘চিত্রণ-২৫’ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
একটু সামনে এগোতেই দেখা যায় চারুকলার ফটক সাজাতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন অনুষদের কারুশিল্পের শিক্ষার্থী নুরেন তারান্নুম নওরিন ও ছাপচিত্রের শিক্ষার্থী তীর্থ কান্তি প্রামাণিক।
দুজনে বলেন, বসন্তকে ঘিরে তারা সকলে একত্রিত হয়ে কাজ করছেন। কাজ করতে সবার অনেক ভালো লাগছে। অনুষদের মঞ্চের দিকে আরও জোড়ালোভাবে কাজ চলছে বলে জানান তারা।
মঞ্চের দিকে চোখ দিতেই দেখা গেল হলুদ-লাল আর রক্তিম পলাশের বর্ণের ন্যায় সাজানো হচ্ছে মঞ্চ। কাছে গিয়ে দেখা যায় মঞ্চজুড়ে বাসন্তী রঙের আভা ছড়াচ্ছে বেশকিছু লোকজ ধাঁচের চিত্র। চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে, মাছ, শখের হাঁড়ি, ঢোল, ঘুড়ি, হাতপাখা, একতারা, লক্ষ্মী পেঁচা, হাতিসহ বিভিন্ন লোকজ ধাঁচের মোটিফ। আর এই পুরো মঞ্চ রাঙিয়ে তুলতে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন অনুষদের চিত্রকলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী প্রণব রায়।
প্রণব রায় বলেন, এবারের পুরো মঞ্চটিকে মূলত ঘুড়ির আদলে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বসন্তের বাতাসে খোলা মাঠে, গ্রামেগঞ্জে এক সময় ঘুড়ি উড়ানো হত। তবে কালের বিবর্তনে ঘুড়ি এখন হারানোর পথে। সেই ঘুড়িকে মানুষের মাঝে টিকিয়ে রাখতেই আমাদের এই প্রয়াস। এছাড়া এবারে ডামি বানানো না হলেও থাকছে ঘুড়ির নাটাই। এর বাইরে চিত্রকর্মের মাধ্যমেই পুরো বসন্তের আমেজকে আমরা ফুটিয়ে তুলতে চাই। এজন্য আমাদের সব সাজসজ্জায় বাসন্তী রঙের আধিক্য রেখেছি। এছাড়া যেহেতু বসন্তের দিনে ভালোবাসা দিবস, সরস্বতী পূজা এবং সুন্দরবন দিবস। আমরা এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সবই উদযাপন করব।
মঞ্চের সামনে দেখা যায় পাটকাঠি এবং কাগজের ফুল, লতা-পাতা ও পাখি দিয়ে বানানো হচ্ছে কোকিল চত্বর। এর নিচে দেওয়া হয়েছে একটি ক্যাকটাস। এবিষয়ে অনুষদের কারুশিল্পের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হোসেন বলেন, সব বাধা বিপত্তি উতরিয়ে বসন্ত আসছে। বসন্তের কোকিল ডাকছে। এভাবে আমাদেরও বেশ কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয় জীবনে। সেজন্যই ক্যাকটাসের উপরে বানানো হয়েছে কোকিল চত্বর। এছাড়া আমরা সবকিছুই সাজিয়েছি বাঙালিয়ানা ধাঁচে। খড়, পাটকাঠি, বাঁশসহ হাতের কাছে পরে থাকা বিভিন্ন উপকরণ দিয়েই আমরা রাঙিয়ে তুলছি চারুকলা প্রাঙ্গণকে।
বসন্তের দিনের আয়োজন নিয়ে কথা হয় চিত্রকলার শিক্ষার্থী উম্মে রুম্মান অভির সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের বসন্তে কাঁথা পুড়িয়ে শীতকে বিদায় জানানোর পাশাপাশি চারুকলার নবীনদের বরণ করে নেওয়া হবে। কাঁথা পুড়ানোর আগে থাকবে আলোচনা সভা। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয় এবং কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এরপরে একটি র্যালি নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করা হবে। এছাড়া বসন্তের দিনে চারুকলা প্রাঙ্গণে থাকবে বেশকিছু পিঠার দোকান আর দিনব্যাপী পুতুল চত্বরে চলবে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। আর সাংস্কৃতিক আয়োজনে থাকবে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত আবৃতি, নাচ ও গানের পরিবেশনা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা প্রতি বছরের মতো এবারো বসন্ত বরণের আয়োজন করেছি। এটা পর্যায়ক্রমে আমাদের অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর আয়োজন করে থাকে। এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের বাঙালির ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। পহেলা বৈশাখ যেভাবে জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে, সেভাবে এই উৎসবটিও যেন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয় আমি সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।