আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে এই দিনে দেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্বিকারে হত্যা করে। বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে এমন হত্যাকাণ্ড পুরো বাঙালি জাতিকে শোকাহত করে তুলেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ। তবে সেই স্মৃতিবিজড়িত স্থান বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও চলছে ‘হিন্দি গান’ বাজিয়ে বনভোজন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সরেজমিন দেখা যায়, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণের দক্ষিণ পাশে বসে বনভোজনের রান্নার জন্য তরি-তরকারি কাটাকাটি চলছে। তারই পশ্চিম পাশে কাপড়ের শামিয়ানা চতুর্দিকে ঘিরে ভেতরে সাউন্ড বক্সে বাজানো হচ্ছে ‘হিন্দি গান’।

এ সময় কথা বলে জানা যায়, তারা ফলিত গণিত বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সেখানে বনভোজনের জন্য তারা বিভাগের সভাপতি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কোনো অনুমতি নেয়নি বলে জানান।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বধ্যভূমির মতো একটি জায়গায় এমন বনভোজন নিয়ে মর্মাহত শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া। তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এসব বিষয়ে আমি খুবই মর্মাহত এবং লজ্জিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি চায়, তাহলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। খুব কম মূল্যে আমরা স্বাধীনতা পাইনি। আমার বাবাসহ যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি অমর্যাদা করছে এই নতুন প্রজন্ম। ওখানে যারা শায়িত আছেন তারা নিজেদের জীবনের মূল্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেখানে গান-বাজনা পিকনিক হতে পারে না।

সরষের মধ্যে ভূত আছে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, আমি বিশ্বাস করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে এমন কেউ আছে, যারা এ গণহত্যার ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়। এখানে গান-বাজনার আয়োজনের মাধ্যমে মানুষের মনকে বিঘ্নিত করতে চায়। সরষের মধ্যে ভূত আছে। তা নাহলে এগুলো কেন বন্ধ হবে না!

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের বনভোজন করার জন্য আলাদা জায়গা দেওয়া হয়েছে এবং বধ্যভূমির সামনে বনভোজন করতে নিষেধ করা হয়েছে। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।