প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩৭ পিএম
‘জাবিতে নিয়োগ বোর্ডে বাধার নেপথ্যে ছাত্রলীগ নেত্রী’ শিরোনামে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়ি।
প্রতিবাদলিপিতে তিনি দাবি করেন, প্রকাশিত সংবাদে আমার বিরুদ্ধে স্নাতকে পঞ্চম স্থান অর্জন করার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। কারণ আমি স্নাতকে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছি। এছাড়া তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকলের দায়ে বহিষ্কৃত ও প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও মিথ্যা ও বানোয়াট। কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংবাদ করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: সংবাদ প্রকাশের আগের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অফিসের সামনে আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া এবং তাদের বক্তব্য থেকে সাদিয়া আফরিন পাপড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার সহপাঠীরা জানিয়েছেন, স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষায় নুশরাত জাহান ও সাদিয়া আফরিন পাপড়ি ৩.৭১ পেয়ে যৌথভাবে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। তবে নির্ধারিত সময়ে লাইব্রেরি কার্ড জমা না দেওয়ায় সেসময় ১৫ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত হয়; যাদের মধ্যে নুশরাত জাহানও রয়েছেন। ফলাফল শিটে নুশরাত জাহানের নাম উল্লেখ নেই। তবে নুশরাত জাহানের ক্লাস রোল সাদিয়া আফরিনের আগে হওয়ায় সহপাঠীরা নুশরাত জাহানকে চতুর্থ স্থান ও পাপড়িকে পঞ্চম স্থান বলে উল্লেখ করেছেন। প্রতিবাদলিপিতে পাপড়ি যে ফলাফল শিট সরবরাহ করেছেন, সেখানে তিনি নুশরাত জাহানের বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেছেন।
এছাড়া তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত ও প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে পাপড়ির জড়িত থাকার বিষয়টিও প্রতিবেদকের নিজস্ব বক্তব্য নয়। রসায়ন বিভাগের একাধিক শিক্ষক ও পাপড়ির সহপাঠীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এমনকি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৫০ পেলেও প্রশ্ন পাওয়ার কারণে পাপড়ি তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৮৯ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা। তখন অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি কোর্সে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পাপড়ি পরবর্তীতে সেই পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। তাছাড়া সম্প্রতি প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় রসায়ন বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই চক্রের মূলহোতা পাপড়ি বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
গত ৩০ আগস্ট প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী নিয়ে সাবেক উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. শরীফ এনামুল কবিরের কক্ষে যান ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। তখন সাদিয়াকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও অধ্যাপক মো. শরীফ এনামুল কবিরকে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকি একাধিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। এছাড়া স্নাতকোত্তরের লিখিত পরীক্ষা ২০২১ সালের ২ অক্টোবর এবং থিসিসের মৌখিক পরীক্ষা ২০২২ সালের ৭ জুন শেষ হলেও ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে পাপড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করছিলেন। এমনকি ক্ষমতার জোরে দুটি সিট দখল করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে তার প্রভাবশালী ছেলবন্ধু একই বিভাগ ও ব্যাচের দেলোয়ার হোসেন এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের সঙ্গে গভীর সখ্যতা থাকায় পাপড়ির এসব অপকর্ম সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ সরাসরি মুখ খুলতে চাননি। তবে কোনোভাবেই তথ্যদাতার পরিচয় প্রকাশ করা হবে না-এমন শর্তে তারা প্রতিবেদকের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলে পাপড়ির বিরুদ্ধে এসব তথ্য দিয়েছেন।