Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

প্রথমবার প্রিলি ফেল করা সেই নুসরাত বিজেএসে সেরা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম

প্রথমবার প্রিলি ফেল করা সেই নুসরাত বিজেএসে সেরা

নুসরাত জেরিন জেনি ১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। ছবি: যুগান্তর

নুসরাত জেরিন জেনি ১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। অথচ এই তরুণীই আগের বিজেএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন।  

নুসরাতের জন্ম গাইবান্ধা জেলায়। বাবা একেএম আব্দুর নুর ও মা মোসা. শিরীন তাজ দুজনেই পেশায় শিক্ষক। 

নুসরাত বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ সেশনে আইন বিভাগে ভর্তি হন। 

সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় এটি ছিল তার দ্বিতীয় পরীক্ষা। এর আগে ১৫তম বিজেএস পরীক্ষা দেন তিনি। কিন্তু সেবার প্রিলিতেই অকৃতকার্য হন নুসরাত।

সম্প্রতি নুসরাত বিজেএস পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন যুগান্তরকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানিক রাইহান বাপ্পী। 
  
যুগান্তর: প্রথমবার প্রিলি ফেল করে দ্বিতীয়বার সারা দেশে প্রথম হলেন কীভাবে? 

নুসরাত: সত্যি কথা বলতে— প্রথমবার প্রিলি ফেল করাতে আমার কোনো খারাপ লাগেনি। কারণ যখন সার্কুলার হয়েছিল, তখন আমার অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়। একই সঙ্গে আমার পরিবার একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। ফলে সে ধরনের পরীক্ষার প্রস্ততি নেওয়ার সুযোগ পায়নি। তবে প্রিলি ফেল করলেও কোনো রকম মন খারাপ হয়নি। 

এর বড় কারণ হচ্ছে— আমি অনার্সে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট ছিলাম। পরে ফ্যাকাল্টি ফার্স্ট হয়ে গোল্ড মেডেলের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকে সিলেকটেড হয়েছিলাম। পাশাপাশি ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদকও পেয়েছিলাম। ফলে এতগুলো প্রাপ্তির মাঝে ফেল করার হতাশা আমাকে গ্রাস করতে পারেনি। 

তবে দ্বিতীয় বিজেএসটা যখন পাই, তখন আমার মাস্টার্স পরীক্ষা চলছিল। প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে টুকটাক বুঝে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পরের পরীক্ষায় প্রিলির জন্য ৩৬ দিন সময় পেয়েছিলাম। যেহেতু আমার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ভালো ছিল, সেখান থেকে এ পরীক্ষায় ৬০০ মার্কের প্রস্তুতি এগিয়ে ছিল। আর জেনারেল পার্টে ৪০০ মার্কের প্রস্তুতি ভালোভাবে নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলাম। 

যুগান্তর: সারা দেশে প্রথম হয়ে কেমন লাগছে? 

নুসরাত: পড়ালেখা শেষ না হতেই সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এটা আমার জন্য অনেক বেশি গর্বের। অনেক বেশি কৃতজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার প্রতি। যার ইচ্ছাই এটি সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি এ সফলতার পেছনে আমার মা-বাবা, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণের অবদান অনেক। তাদের প্রতিও চিরকৃতজ্ঞ।

যুগান্তর : জজ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন? 

নুসরাত: প্রথমত স্বপ্ন ছিল ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ভালো রেজাল্ট করব। পাশাপাশি সুযোগ পেলে সেখানেই শিক্ষক হব। পরে দেখলাম ভার্সিটির শিক্ষক হতে গেলে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। তার পরে মনে হলো অন্যদিকে চেষ্টা করা উচিত। আব্বু-আম্মু চায় একসঙ্গে সব করি। এ জন্য পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। আগে থেকে তেমন চাকরি পরীক্ষা ফোকাস ছিল না, ফোর্থ ইয়ার থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। 

যুগান্তর: নিজেকে কোথায় দেখতে চান? 

নুসরাত: আসলে যেখানে এসেছি, এতটা ওপরে নিজেকে দেখতি চাইনি। চাওয়ার চেয়ে বেশি আমার ভাগ্যে হয়েছে। 
তাই আমি চাইব— সৃষ্টি কর্তা আমাকে সেখানে নিয়ে যাক, যেখানে থাকলে আমি ভালো থাকব, দেশের জন্য কাজ করতে পারব, বাবা-মাকে খুশি রাখতে পারব।   

যুগান্তর: বিচারক জীবনে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে চান? 

নুসরাত: বিচারক অনেক মার্যাদার একটা আসন। এর সঙ্গে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাস জড়িত। সর্বোচ্চ সৎ থেকে যেন ভালো কিছু করে যেতে পারি, সে জন্য আমার যা কিছু করা দরকার, তাই আমি করব। আল্লাহ আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন সে সম্মান আমার সর্বোচ্চ দিয়ে রাখার চেষ্টা করব। 

যুগান্তর: অনুজদের জন্য আপনার কী পরামর্শ: 

নুসরতা: ছোট ভাইবোনদের প্রতি একটাই পরামর্শ থাকবে— তাদের স্বপ্ন যেন, তাদের মতো করে দেখে। স্বপ্নগুলো যেন নিজের মতো হয়। কাউকে যেন দেখিয়ে দিতে না হয়। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে কীভাবে কাজ করতে হয়, কীভাবে করলে ভালো হয়; সেটাও নিজেদের বের করতে হবে। লক্ষ্য যেমন নিজেদের ঠিক করতে হবে, ঠিক তেমনি যাত্রাপথও নিজেকে ঠিক করতে হবে। 

যুগান্তর: আপনাকে ধন্যবাদ 

নুসরাত: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম