‘খাদিজার প্রতি জুলুম করা হচ্ছে, তার মুক্তির আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে জবি প্রশাসন’
জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০২ পিএম
ছবি-যুগান্তর
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার নিঃশর্ত মুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকরিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর প্রাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। পরে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি ও খাদিজার মুক্তি দাবিতে সংগ্রহ করা ২ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরের অনুলিপি দেন তারা।
অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় উপাচার্যের পক্ষে স্মারকলিপি ও স্বাক্ষরের কপি গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন আহমদ।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, খাদিজাতুল কুবরাকে বিনাবিচারে এক বছরের বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে। খাদিজার মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাধা দিয়ে তাদের ন্যক্কারজনক আচরণ প্রদর্শন করেছে। তার মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রণ প্রমাণ করে, খাদিজার প্রতি জুলুম করা হচ্ছে। খাদিজাকে মুক্তি দিতে হবে এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে যাতে খাদিজার মতো জুলুমের শিকার হতে না হয়, এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোমাইয়া সোমা বলেন, খাদিজার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানা আজও তার বিরুদ্ধে কোনো চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি। তাহলে কেন তাকে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হলো? এই টালবাহানা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দাবি আদায়ে আমাদের প্রথম বাধা দেয় এই তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যারা স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে তাদের জামায়াত-শিবির বলে হুমকি দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ সুবিধাভোগী গোষ্ঠী আমাদের মোবাইল ফোনের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ চেক করেছে। তাদের আসলে বিবেক থাকা উচিত, যখন খাদিজার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন হয়েছে, তখন আমাদের বিশ্বিবদ্যালয় থেকে কোনো আন্দোলন হয়নি। দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থাকার পর আমরা সোচ্চার হয়েছি, সেখানেও তারা বাধা দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে সোমা বলেন, আমাদের পুরো বিশ্ববিদ্যালয় একটি অকার্যকর প্রশাসন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তারা একটি রাজকীয় শ্বেত পাথরের ভবনে বসে আছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলতে না পারলে আপনারা দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
নতুন পাশ হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নতুন মোড়কে নাম দেওয়া হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। এটাও একটা কালো আইন। এ আইনটি করা হয়েছে জনগণের কণ্ঠরোধ করার জন্য। এই আইন মানি না।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সব শিক্ষার্থী তাদের মুক্ত জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবে। আজকে আমরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। একজন শিক্ষার্থীকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনাবিচারে আটক রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিশ্চুপ আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ বলেন, আমার একটাই দাবি, এ বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে খাদিজার মুক্তি চাই। তার শিক্ষাজীবন যাতে ধ্বংস না হয়, একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে দীর্ঘদিন বিনাবিচারে আটক রাখা মারাত্মক অন্যায়।