Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

খাদিজার মুক্তির দাবিতে জবিতে মানববন্ধন

Icon

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম

খাদিজার মুক্তির দাবিতে জবিতে মানববন্ধন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, খাদিজাতুল কুবরাকে বিনা বিচারে ৩৬৫ দিন জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। খাদিজাকে আটকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে সরকার। যে কারণে খাদিজার ওপর চলমান অন্যায় ও জুলুমের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকরা মুখ বন্ধ করে আছেন। এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

তারা আরও বলেন, একটা ওয়েবিনার সঞ্চালনা করতে গিয়ে খাদিজা যে প্রশ্নগুলো করেছিল তা দেশের সর্বসাধারণ মানুষের মনের কথা। সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বললে যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা হয়, তাহলে আমরা সবাই অপরাধী। খাদিজাকে যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দেওয়া হয়েছে তা কখনোই রাষ্ট্রদ্রোহিতা হতে পারে না। আমাদের লড়াই শুধু খাদিজার মুক্তির জন্য নয়, এ লড়াই সবার মুক্তির জন্য।

মানববন্ধনে খাদিজার সহপাঠী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা জাহান মুন বলেন, বাক-স্বাধীনতা বলে আমাদের যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে সেটার সুফল আমরা কোথায় পাচ্ছি? আজ দেশে যদি বাকস্বাধীনতা থাকত তাহলে আমার সহপাঠীকে বিনা বিচারে এক বছর কারাগারে থাকতে হতো না। 

মানববন্ধনে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা বলেন, আমাদের বিশ্বিবদ্যালয়ে একটি অকার্যকর প্রশাসন আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে আমরা গিয়েছিলাম। তারা বলেছে, খাদিজাকে নিয়ে যারা কথা বলবে, তারাও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে। যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী জেলে থাকলেও নির্লিপ্ত অবস্থান গ্রহণ করে-এ ধরনের প্রশাসন আমাদের দরকার নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, খাদিজা কি চোর, ডাকাত? সে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। আপনাদের একজন শিক্ষার্থী এক বছর ধরে জেলে আছে। কিন্তু আপনারা তার জন্য কিছুই করতে পারলেন না। এর চেয়ে লজ্জার কিছু হতে পারে না।

মানববন্ধনে খাদিজার মা ফাতেমা খাতুন মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এক বছর হয়ে গেল খাদিজাকে আমি পাশে নিয়ে ঘুমাতে পারি না। কোন অপরাধে আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হলো? শুধু একটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করার জন্য এতদিন জেলে থাকতে হবে? এটা আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার মেয়েকে যেন আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। সে দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত। আমি মেয়েকে চিকিৎসা করাতেও পারলাম না। খাদিজাকে নিয়ে চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার এমন কোনোদিন নেই, যেদিন চোখের পানি ঝরে না।

খাদিজার বোন সিরাজুম মনিরা মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে তার বোনকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমি শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে নয়, নিজের তাড়না থেকে আজকের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এভাবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে পারে না। একজন শিক্ষার্থী এতদিন কারাগারে আছে, সে কতটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও ট্রমার মধ্যে আছে! আমি দাবি জানাই, অতিসত্বর তাকে জামিন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সুযোগ দিন।

খাদিজাকে অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান অ্যামনেস্টির : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক বছর ধরে কারাবন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টির অন্তর্র্বর্তীকালীন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক নাদিয়া রহমান এ আহ্বান জানান।

নাদিয়া রহমান বিবৃতিতে বলেন, ‘খাদিজার বারবার জামিন আবেদন নাকচ এবং বছরব্যাপী কারাবন্দিত্ব বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের একটি নিদারুণ ঘটনা। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা এবং ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করার কথা, কারাগারে বসে একটি দমনমূলক আইনের মাধ্যমে ভাগ্যে কী ঘটবে, সে জন্য অপেক্ষায় থাকার কথা নয়।’

অ্যামনেস্টির কর্মকর্তা বলেন, খাদিজাতুল কুবরার এই আটকাবস্থা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষের সমালোচনাকারী ব্যক্তিদের কথা বলার সুযোগ সংকুচিত করা হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের জন্য খারাপ নজির তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার দমনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করলেও কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সরকারের সমালোচনাকারী ও অধিকারকর্মীদের হয়রানি করতে এই আইন প্রয়োগ করছে বলে মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বিবৃতিতে নাদিয়া রহমান বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে খাদিজাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে যারা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের চর্চার জন্য এভাবে বন্দি আছেন, তাদেরও মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম