Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

‘নিজের ফাঁসি’ নিজেই কার্যকর করবেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা!

Icon

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৫:২০ এএম

‘নিজের ফাঁসি’ নিজেই কার্যকর করবেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা!

এক শিক্ষার্থীকে টাকার বিনিময়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ভর্তি সুযোগ করা দেওয়া এবং চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা না দেওয়ায় অপহরণ করার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মীসহ সাত-আটজনের নামে মামলা হয়েছে।

এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন মামলার অন্যতম আসামি এবং বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে ‘প্রক্সিকাণ্ডের মূল হোতা’ হিসেবে নাম উঠে আসা শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার নামে সুষ্ঠু তদন্ত করে যদি কিছু প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রশাসন ভবনের সামনে আমি আমার ফাঁসি নিজে কার্যকর করব। নিজের গলায় নিজেই দড়িটা দিব। রাজুর (মামলার আরেক আসামি) সঙ্গে ফোনে কখনো আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। যে ব্যক্তির সঙ্গে আমার ফোনেই কথা হয় না, তার সঙ্গে কিভাবে আমার যুক্ত হওয়া সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনের প্রথমে লিখিত বক্তব্যে মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বলেন, আমার বিরুদ্ধে জনৈক মোছা. রেহেনা বেগম এবং রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়েরকৃত এজাহার সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে একটি অপহরণ এবং প্রক্সি জালিয়াতির ঘটনা জানতে পারি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঘটনাটি (অপহরণ) শেরে বাংলা হলে ঘটে।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে শুক্রবার সকালে জানতে পারি যে, ওই ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমাকে একটি মামলায় এক নম্বর এবং আরেকটি মামলায় তিন নম্বর আসামি করে মতিহার থানায় মামলার আবেদন করা হয় এবং এই খবরটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা আমার জন্য সম্পূর্ণভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে এর আগেও আমার বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা চালানো হয় এবং সবগুলোই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এটা প্রমাণিত হয় যে, আমি বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার।

তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আমার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা ঘোষণা দিয়েছেন- যেকোনো মূল্যে তন্ময়ের উইকেট ফেলতে হবে অ্যাট অ্যানি কস্ট' তারা আমাকে পদবঞ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় জড়িতদের আমার কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও আমার নামে অভিযোগ আনা হয়েছে। গতদিন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরিষ্কারভাবে ঘটনার বর্ণনা দিলেও, পরদিন হাস্যকরভাবে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হই।

বারবার আপনার বিরুদ্ধেই কেন প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছিল, তাদের সঙ্গে কিন্তু আমার কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল না, ছিল রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে কমিটি হয়ে যেতে পারে। আমার বিরুদ্ধে যেহেতু অন্য কোনো অভিযোগ নাই, তাই তারা এই অভিযোগটা বারবার আনে। এখন আমাকে তো তাদের আটকাতে হবে। আমি শক্ত প্রতিপক্ষ না হলে, আমার বিরুদ্ধে কিন্তু কখনো কোনো অভিযোগ আসত না।

প্রক্সির সঙ্গে জড়িত না থাকলে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকার লেনদেন কি কারণে হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখবেন যে, আমার অ্যাকাউন্টের অধিকাংশ টাকা আমার পরিবার থেকে ঢুকত। আর আমিতো সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ধান, চাল আর পাটের ব্যবসা করি।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের মধ্যেও কিন্তু একটা প্যানেল তৈরি হয়ে গেছে। এখন অনেক শিক্ষকও তাদের ‘মাই ম্যান’ ক্যান্ডিডেটকে ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে দায়িত্বে দেখতে চাই। তারা ভাবে, তাদের ‘মাই ম্যান’ ক্ষমতায় আসলে তারা নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ভালো একটা ফ্যাসিলিটিজ পাবে। এতে অনেক টাকা-পয়সা তারা ইনকাম করতে পারবে।

তাহলে ছাত্রলীগ কি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত; সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি।

উল্লেখ্য, রাবির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রক্সি (বদলি) পরীক্ষা দেওয়ানোর মাধ্যমে চান্স পেয়ে ভর্তি হতে এসে জালিয়াতির কথা স্বীকার করায় আটক হন আহসান হাবীব নামে এক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষার্থীসহ তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইদিন আহসান হাবীবের মা মোছা. রেহেনা বেগমও চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দুই-তিনজনের নামে মামলা করেছেন। এর মধ্যে মুশফিক তাহমিদ তন্ময় অন্যতম আসামি। এর আগেও তার বিরুদ্ধে প্রক্সির অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারও করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে ফের বহিষ্কার প্রত্যাহার করে নেয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম