জাবি প্রক্টর মহা-অপরাধ করেছেন: ফরহাদ মজহার
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০৭:০৫ পিএম
সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য এবং ইসলামিক পাঠচক্র আয়োজনের অভিযোগ এনে গত ৭ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন জব্দ করে দুদিন আটকে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেছেন বিশিষ্ট কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।
তার নিজের নামীয় ভেরিফাইয়েড ফেসবুক পেজ থেকে উক্ত ঘটনাকে ‘মহা-অপরাধ’ উল্লেখ করে তিনি এ দাবি জানান।
ফরহাদ মজহার তার ফেসবুক পেজে শুক্রবার যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান ৪৭ ব্যাচের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলের পাসওয়ার্ডসহ মোবাইল ফোন সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালন ও জঙ্গিবাদ প্রচারের অভিযোগ এনে জব্দ করেছেন এবং দুইদিন জব্দ রাখার পর ফিরিয়ে দিয়েছেন। ‘আজাদি’, ‘জাহেলিয়াত’, ‘হুকুমাত’- এইসব নাকি জঙ্গিবাদী শব্দ। কিন্তু জব্দ করা মোবাইলে দুই দিন ধরে তল্লাশি চালিয়েও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কথোপকথন কিংবা নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়া হয়েছে। আ স ম ফিরোজ-উল হাসান কি বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি ধরার জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন? নাকি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার সহায়ক ভূমিকা পালন করবার জন্য?
তিনি আরও দাবি করেন, ‘নাগরিকদের প্রাইভেসি লঙ্ঘন করে তিনি বর্তমান ফ্যাসিস্ট পরিস্থিতিতে ‘মহা-অপরাধ’ করেছেন, সেই অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। নিদেন পক্ষে তাকে অবশ্যই সব শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ তিনি সব শিক্ষার্থীর প্রাইভেসির জন্য হুমকি। তাকে অবিলম্বে অপসারণ করা দরকার। এই সময় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা এবং স্কুলে নিজ নিজ নেতৃত্বে তরুণদের পাঠচক্র সংগঠিত করা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসাগুলোতে জ্ঞানচর্চা রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে বহু আগে। এগুলো সার্টিফিকেট বেচা-বিক্রির দোকান বা ব্যবসায়িক করপোরেশন হয়ে গিয়েছে। তাহলে জ্ঞানবিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে বিচরণের ক্ষমতা অর্জনের ওপর বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের তরুণদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। এই বাস্তবতায় ‘স্ব-চিন্তন’ নামক একটি পাঠচক্র তরুণরা আয়োজন করছে। তাকে উৎসাহিত না করে আ স ম ফিরোজ-উল হাসান শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত মোবাইল কেড়ে নিয়েছেন। এটা মহা-অপরাধ। একে উপেক্ষা করবার সুযোগ নাই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান বলেন, ফেসবুকে কে কী বলল তাতে আমার কী যায় আসে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও তো অনেকেই অনেক কথা বলে। এসব আমার দেখার বিষয় না, আর এতকিছু দেখাও সম্ভব না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্বটুকু পালন করেছি। প্রক্টরের কাজ তো সবাইকে খুশি করা না। তাছাড়া এ দায়িত্বে থেকে সবাইকে খুশি করাও সম্ভব না।
তবে এর আগে মোবাইল জব্দের ব্যাপারে প্রক্টর সাংবাদিকদের জানান, ‘মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের সময় আমরা সেখানে উপস্থিত হই। তখন তাদের বক্তব্যে কিছু টার্ম উঠে আসে যেগুলো আপাত বিচারে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বলে মনে হয়েছে। পাঠ প্রস্তাবনায় ‘আজাদি’, ‘জাহেলিয়াত’, ‘হুকুমাত’ শব্দগুলো থাকায় আমাদের সন্দেহ হয়েছে। তাই আমরা তৎক্ষণাৎ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবাইল ফোনটি নিয়ে আসি।’
কোনো শিক্ষার্থীর ফোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জব্দ করে তল্লাশির এখতিয়ার রাখে কিনা- জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ কিংবা ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধিতে এমন কিছু নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আমাকে এটা করতে হয়েছে।
মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, ‘তার মোবাইল চেক করে আমরা সন্দেহজনক কিছু পাইনি। তাই মোবাইল ফেরত দিয়েছি।’
তবে শিবির কিংবা নব্য ইসলামিক দল হিসেবে কার্য পরিচালনার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের আদর্শ শিবিরের আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। যদি এটাকে কেন্দ্র করে আমাদের শিবির ট্যাগ ও প্রচার করা হয় তা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। আমরা মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক ও মননশীলতা চর্চা করে থাকি। এটা সম্পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্লাটফর্ম। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গত বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে ‘স্ব-চিন্তন’ গ্রুপের সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ‘স্ব-চিন্তন’ শিক্ষামূলক একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও মননশীল চর্চার প্লাটফর্ম। এখানে মুক্ত আলোচনার স্বার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা থাকতে পারে। তবে এটির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা নেই।
উল্লেখ্য, মোবাইল জব্দের পর দুই দিন ধরে তল্লাশি চালিয়েও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কথোপকথন ও নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ৯ আগস্ট দুপুরে মোবাইলটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।