বাংলা দ্বিতীয়পত্রে যেভাবে ভালো করবে

উজ্জ্বল কুমার সাহা
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৩৩ পিএম

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, এসএসসিতে বাংলায় দুটি পত্রের ওপর পরীক্ষা হবে। মানবণ্টন ইতোমধ্যেই জানা হয়ে গেছে হয়তো। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বহুনির্বাচনি অংশে ৩০ নম্বরের মধ্যে ব্যাকরণ থেকেই ৩০টি প্রশ্ন থাকবে। বহুনির্বাচনি (ব্যাকরণ) অংশের ৩০টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য তোমার পাঠ্য বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইটি ভালো করে আয়ত্তে রাখতে হবে।
রচনামূলক অংশে ৭০ নম্বরের মধ্যে অনুচ্ছেদে ১০ নম্বর, পত্রলিখনে ১০ নম্বর, সারাংশ/সারমর্মে ১০ নম্বর, ভাবসম্প্রসারণে ১০ নম্বর, প্রতিবেদনে ১০ নম্বর ও প্রবন্ধ রচনায় ২০ নম্বর থাকে। বাংলা যতই সহজ হোক না কেন, অন্যান্য বিষয়ের মতো বাংলাকেও গুরুত্ব দিয়ে পড়া উচিত। বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ক্ষেত্রে ব্যাকরণে যদি কোনো অধ্যায় এখনো রিভিশন করা না হয়ে থাকে, তবে নতুন করে রিভিশন শুরু করার দরকার নেই, বরং স্কুলে পরীক্ষায় নেয়া প্রশ্নগুলো সমাধান করে ফেল- একটি করে প্রতিদিন।
সমাধান করতে গিয়ে পাওয়া ভুলগুলো শুধরে নিতে বই খুলে তোমার উত্তর ভুল হওয়ার কারণটি দেখে নাও। এভাবে একটা ভুল শুধরে নিলে, দশটা নতুন তথ্য জানতে পারবে আর ব্যাকরণ ধীরে ধীরে আয়ত্তে আসবে।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বিরচন অংশের প্রত্যেকটি বিষয়ের নম্বর বণ্টন হয় বিষয়বস্তু, ভাষা, বানান, বাক্যগঠন ও আঙ্গিকগত দিক বিবেচনা করে। অনুচ্ছেদ লিখতে হবে একটি মাত্র অনুচ্ছেদে বা প্যারায়। অনুচ্ছেদের জন্য বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় পতাকা, বইপড়া, বইমেলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পদ্মা সেতু, বৈশাখী মেলা, অতিথি পাখি, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখতে পার। এরপর সারাংশ বা সারমর্ম। সারাংশ বা সারমর্ম লেখার সময় অবশ্যই স্মরণ রাখা আবশ্যক- ১. উল্লিখিত অংশটুকু গভীর মনোযোগের সঙ্গে পাঠ করতে হবে। আনুষঙ্গিক বিষয়াবলি বাদ দিয়ে মূলভাবটি বুঝে নিতে হবে। ২. সারাংশ বা সারমর্ম লিখন একটিমাত্র অনুচ্ছেদে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং তা কোনোভাবেই মূল অনুচ্ছেদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। সাধারণত তিন-চারটি বাক্যে সারাংশ বা সারমর্ম লিখতে হয়। ৩. মূলভাবকে খুব সংক্ষেপে গুছিয়ে লিখতে হবে। প্রারম্ভিক বাক্যটি আকর্ষণীয় ও সুলিখিত হওয়া উচিত। ৪. মূলপাঠে প্রত্যক্ষ উক্তি থাকলে সারাংশ বা সারমর্মে তা পরোক্ষ উক্তিতে সংক্ষেপে লিখতে হবে। বক্তব্যে বক্তাপক্ষ (আমি/আমরা) বা শ্রোতাপক্ষ (তুমি/তোমরা) ব্যবহার পরিহার করা আবশ্যক। ৫. একই ভাবের পুনরুল্লেখ বর্জনীয়। মূল অংশে উদ্ধৃতি থাকলে সারাংশ বা সারমর্মে তার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। ৬. যথাসম্ভব সহজ ভাষায় ও সরল বাক্যে মূলভাবকে প্রাঞ্জলভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। ভাবের যথার্থ ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। ৭. সারাংশ বা সারমর্ম লেখার ক্ষেত্রে প্রদত্ত মূল অংশের রচয়িতার নাম উল্লেখ করা যাবে না। তেমনই প্রদত্ত অংশ কোন গদ্য বা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে তাও উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। ‘লেখক বলেছেন’ বা ‘কবি বলেছেন’ এ জাতীয় বক্তব্যও পরিহার করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা, ভাব-সম্প্রসারণ লেখার সময়ও কয়েকটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যেমন- ভাব-সম্প্রসারণের সময় উদ্ধৃত অংশ বা বাক্য মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। লেখক কী বলতে চেয়েছেন তার যথার্থ মর্ম বুঝতে পারলে ভাব-সম্প্রসারণ করা সহজ হয়। ভাব-সম্প্রসারণের বিষয়বস্তুকে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, উপমা, দৃষ্টান্ত ও যুক্তি দিয়ে সহজভাবে উপস্থাপন করতে হয়। প্রয়োজনে ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক বা অন্য যে কোনো সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে। অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক, তথ্যনির্ভর নয়- এমন বক্তব্য পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। একই কথার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ভাব-সম্প্র্রসারণে অযথা বেশি অনুচ্ছেদ করা উচিত নয়। সব বক্তব্য তিনটি অনুচ্ছেদে (মূলভাব, সম্প্রসারিত ভাব ও মন্তব্য) আবদ্ধ রাখতে হবে। ভাব-সম্প্রসারণের ভাষা হতে হবে সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ও সর্বজনগ্রাহ্য। প্রয়োজনে প্রবাদ-প্রবচন ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি ব্যবহার করা যাবে। তবে অবশ্যই বিষয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে।
ভাব-সম্প্রসারণ লেখার ক্ষেত্রে প্রদত্ত কথাটির লেখক বা কবির নাম লেখা যাবে না। তেমনই প্রদত্ত অংশ কোন কবিতা বা গদ্য থেকে নেওয়া হয়েছে, তাও উল্লেখ করা যাবে না। আবেদনপত্র ও চিঠি থেকে যে কোনো একটির উত্তর করতে হয়। তোমরা সবসময় আবেদনপত্রের উত্তর করার চেষ্টা করবে। আবেদনপত্রে তুলনামূলক বেশি নম্বর পাওয়া যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিবেদন। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে প্রতিবেদন। বিভিন্ন বইয়ে এবং বিভিন্ন শিক্ষক ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রতিবেদন শিখিয়ে থাকেন। তবে তোমাদের এনসিটিবির বইতে যেভাবে, যে নিয়মে প্রতিবেদন লেখা আছে সেভাবে তোমরা প্রতিবেদনের উত্তর লিখবে। সবশেষে থাকল প্রবন্ধ-রচনা। সাধারণত সমকালীন সমস্যামূলক বিষয় থেকে একটি, নীতি-নৈতিকতা শিক্ষামূলক একটি ও বিজ্ঞান বিষয়ক একটিসহ মোট তিনটি বিষয়ের মধ্যে একটির উত্তর লিখতে হয়।
সমকালীন সমস্যামূলক ও বিজ্ঞান বিষয়ক যে কোনো একটি রচনা তোমরা লিখেতে পার। স্বদেশপ্রেম, অধ্যবসায়, সময়ানুবর্তিতা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান, কৃষিকাজে বিজ্ঞান, মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প, স্বপ্নের পদ্মা সেতু এ বিষয়গুলো তোমরা ভালো করে আয়ত্তে রাখবে।
লেখক: প্রভাষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর, ঢাকা