এসএসসি পরীক্ষা ২০২৩ : বাংলা প্রথমপত্রের আলোচনা
ড. সনজিত পাল
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫৩ পিএম
আশা করি সবাই ভালো আছ। আগামী ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষা-২০২৩ এর প্রথম পরীক্ষা বাংলা প্রথমপত্র। আমি বিশ্বাস করি তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিয়েছ। তবে যারা বাংলা প্রথমপত্রে একটু দুর্বল কিংবা ভালো প্রস্তুতির জন্য একটু সহায়তা চাও; তোমাদের জন্য আমি একটি সাজেশন দিচ্ছি। তোমরা জান, তোমাদের মোট এগারোটি প্রশ্ন থেকে সাতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
গদ্য ও কবিতা থেকে কমপক্ষে দুটি করে এবং নাটক ও উপন্যাস থেকে কমপক্ষে একটি করে মোট সাতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা, নাটক ও উপন্যাস থেকে দুটি করে মোট চারটি প্রশ্ন থাকবে; গদ্য থেকে থাকবে চারটি এবং কবিতা থেকে থাকবে তিনটি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গদ্য ও কবিতার প্রশ্নগুলো শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ধরতে পারে না কিংবা বুঝে উঠতে পারে না। বিশেষ করে গদ্য অংশের প্রবন্ধ থেকে যদি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকে।
আবার কবিতার প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখার সময় শাব্দিক অর্থের চেয়ে ভাবার্থ জেনে উত্তর করার প্রয়োজন হয় বলে শিক্ষার্থীরা উত্তর গুলিয়ে ফেলে। তাই প্রয়োজনীয় তথ্য না দেওয়ার কারণে কাক্সিক্ষত নম্বর আসে না। আমি তোমাদের জন্য একটি পরামর্শ দিচ্ছি। যারা বাংলা প্রথমপত্রে সর্বোচ্চ নম্বর পেতে চাও, তোমরা নাটক ও উপন্যাসের অংশ থেকে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করবে।
নাটক ও উপন্যাসের চরিত্র ও ঘটনা সহজেই মনে রাখা যায়। যে কোনো ঘটনা কয়েকবার পড়লে তা সহজেই বুঝতে পারা যায় এবং সেখান থেকে উত্তর দেওয়া সহজ হয়। নাটক ও উপন্যাসের চরিত্রের গভীরতা ও বিস্তার সহজেই বোঝা যায় এবং এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে ভুল কম হয়। প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার স্তরের প্রশ্নে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্র ও সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তি দেখানো সহজেই লিখতে পারা যায়।
নাটক ও উপন্যাসের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি ও তৎকালিন সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়। উপন্যাসের ক্ষেত্রে বুধাকে কেন্দ্র করে যত দিক রয়েছে; বিশেষ করে বুধার বাবা, মা, ভাই, বোনের মৃত্যু ও মৃত্যুজনিত কষ্ট; বুধার ছন্নছাড়া জীবন, যুদ্ধে বুধার অংশগ্রহণ ও বীরত্বগাঁথা, বুধার কাকতাড়ুয়া সেজে দাঁড়িয়ে থাকা, বুধার মানসিক কষ্ট, চাচির কাছ থেকে প্রাপ্ত অবজ্ঞা, পাকিস্তানিদের হত্যা-লুণ্ঠন, ধ্বংসযজ্ঞ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া; শান্তিকমিটির চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন দেওয়া, রাজাকার কমান্ডারের বাড়িতে আগুন দেওয়া, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষের কষ্ট, শহিদ জননী মধুর মায়ের কষ্ট, শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ ইত্যাদি। বহিপীর নাটক থেকে তাহেরা ও তার বাবা-মা সম্পর্কে, বহিপীরের চরিত্র সম্পর্কে, হাসেম আলির প্রগতিশীল চরিত্র সম্পর্কে, হাতেম আলির মহানুভবতা সম্পর্কে এবং খোদেজার কুসংস্কার আচ্ছন্ন চরিত্র সম্পর্কে জানতে হবে। তাছাড়া তৎকালিন সমাজ ব্যবস্থা, নারীর মতামতের অবমূল্যায়ন বা অবজ্ঞা, পীর প্রথার নেতিবাচক দিক, সন্তান বাৎসল্য, সূর্যাস্ত আইনে জমিদারি হারানোর দিক ভালোভাবে জানতে হবে।
গদ্য অংশ থেকে প্রবন্ধ জাতীয় রচনাগুলো যদি কঠিন মনে হয় তবে তা বাদ দিয়ে গল্প জাতীয় রচনাগুলো পড়ে গদ্য অংশ থেকে কমপক্ষে দুটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। একইভাবে কবিতা অংশ থেকে সহজ কবিতাগুলো পড়লেও সহজেই দুটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে। বিশেষ করে প্রতিটি কবিতার মূলদিকগুলো জানতে পারলে এবং কবিতায় বর্ণিত চরিত্র ও বিষয় বুঝতে পারলে সহজেই দুটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে।
শিক্ষার্থীরা, তোমরা সবাই কম-বেশি টেস্ট পেপার থেকে প্রশ্ন সমাধান করেছ। বিগত বছরের বোর্ড প্রশ্নগুলো সমাধান করলে সহজেই বুঝতে পারবে সৃজনশীল প্রশ্নগুলো কোন ধরনের বিষয়কে কেন্দ্র করে আসে। গদ্য অংশের প্রবন্ধ জাতীয় রচনা থেকে দুটির বেশি প্রশ্ন আসে না। তাই গদ্য অংশ থেকে প্রবন্ধ জাতীয় রচনাগুলো সৃজনশীল থেকে বাদ দিলেও গদ্য থেকে দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে। তবে বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য তোমাদের পাঠ্য নির্ধারিত গদ্য, কবিতা, নাটক ও উপন্যাস অবশ্যই ধরে ধরে পড়তে হবে।
প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বিশ মিনিট সময় নেওয়া যাবে। তাই বাড়িতে বেশি বেশি টেস্ট পেপার সমাধান করবে; প্রতিটি প্রশ্নের আকাক্সক্ষা বুঝতে চেষ্টা করবে। প্রশ্নে যা চেয়েছে, যেভাবে চেয়েছে; তা সেভাবেই লিখতে চেষ্টা করবে। তবে প্রবন্ধ, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ইত্যাদির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য জানতে হবে। প্রতিটি গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, নাটক ও উপন্যাসের লেখক পরিচিতি থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য (ছদ্মনাম, পেশা, শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি, কী কী পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন, সাহিত্য রচনা ধরন ও বিষয় কিংবা উপজীব্য) জানতে হবে।
শব্দার্থ ও টীকা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে হবে। প্রতিটি রচনা থেকে যে যে বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন হতে পারে সে সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা রাখতে হবে। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য স্তর অনুসারে তথ্যের বিভাজন জানতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরীক্ষা মানে শুধু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নয়, পরীক্ষা মানে তথ্যের যথাযথ প্রয়োগ। সেখানে সময় ও শ্রম যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে তথ্যকে নির্ভুলভাবে সাজানোর শতভাগ আত্মবিশ্বাস।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা।