হলের দরজা ভেঙে জাবি শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
মোসাদ্দেকুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১২ পিএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহত সিয়াম মো. আরাফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার চিলাহাটি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মীর মশাররফ হোসেন হলে তার নিজ কক্ষ ১১৫/বি থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেন সহপাঠীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকাল থেকে তার রুম বন্ধ ছিল। মাগরিবের পরও রুম বন্ধ দেখে তার এক সহপাঠী দরজায় ধাক্কা দেন। জানালায় সাঁটানো কাগজ সরিয়ে উঁকি দিলে তার ঝুলন্ত দেহ দেখা যায়। পরে রুমের দরজা ভেঙে তাকে বের করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে সেন্টারে নিয়ে গেলে সন্ধ্যায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরাফাত সিয়াম আত্মহত্যা করার আগে মঙ্গলবার ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইংরেজিতে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন- ‘আমার সব জিজ্ঞাসা আজ পথ পেয়েছে। সবকিছুর উত্তর পেয়েছি। এটা স্বর্গীয় মুহূর্ত, যা আমি আগে কখনো পরখ করিনি। কোনো শব্দ দিয়ে তা বর্ণনা করা যাবে না...সমস্ত জীবনে একটা প্রশ্নই আমাকে তাড়া করত। জীবনের মানে কী? আমি আমার সমস্ত জীবনজুড়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি। আমি প্রায় সম্ভাব্য সব বই পড়েছি...কিন্তু একটা বিষয় জানা জরুরি যে, কেউ তোমাকে এটা শেখাতে পারবে না...জীবনকে বুঝতে হলে তোমাকে আগে মৃত্যুকে বুঝতে হবে। এটা সবকিছুর পরিসমাপ্তি। যখনই তুমি মৃত্যুকে বুঝতে পারবে তখনই তুমি জীবনের উদ্দেশ্য জানতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের উপ-প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, সিয়ামকে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে তার সহপাঠীরা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। এ সময় তার গলায় ফাঁস লাগানো ছিল। আমরা তার পালস চেক করেও পালস পাইনি এবং যাবতীয় পরীক্ষা করে তাকে ক্লিনিক্যালি মৃত ঘোষণা করি।
এ সময় আরাফত সিয়ামের কক্ষ থেকে সদগুরুর লেখা ‘ডেথ’ বইটি পাওয়া যায়। হলের অনেকের ভাষ্যমতে তিনি বেশ কিছুদিন যাবৎ মেডিটেশন করছিলেন। এছাড়া তিনি কিছুদিন যাবৎ আধ্যাত্মিক ধরনের কথাবার্তা বলতেন সবার সঙ্গে। জানা যায়, তিনি সেশন ড্রপ আউট করেন এবং ৪৭ ব্যাচের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমরা আরাফাত সিয়ামের আত্মহত্যার ঘটনাটি জেনেছি। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাত ১১টা পর্যন্ত তার মৃতদেহ বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।