রাজধানীর কলেজগুলোতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৯ পিএম
নাচ-গান, হাসি-কান্না আর আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে এইচএসসির ফল উদযাপন করেছেন রাজধানীর শিক্ষার্থীরা। বুধবার ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কলেজগুলোতে উচ্ছ্বাসে যেন রূপ নেয় বাঁধভাঙা জোয়ারে।
অভিভাবক ও শিক্ষকরাও শরিক হন সে আনন্দে। কেউ ‘ভি চিহ্ন’ দেখিয়ে আবার কেউবা সেলফি তুলেছেন। তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগায় ভিড় ঠেলে নোটিশ বোর্ডে ফল দেখার চিরচেনা সেই চিত্র দেখা যায়নি। ইন্টারনেটে আগেই ফল জানলেও আনন্দ ভাগাভাগি করতে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন প্রিয় কলেজ ক্যাম্পাসে।
প্রত্যাশিত ফলে যেমন ঝরেছে আনন্দাশ্রু, তেমনি বাঁধভাঙা উল্লাসের আড়ালেও ছিল বেদনার চিত্র। আশানুরূপ ফল না পেয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সেখানে।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, মাইলস্টোন কলেজ ও ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ ঘুরে দেখা যায়- বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। সহপাঠীরা দল বেঁধে নাচ-গান করছেন, মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন।
আবারো শতভাগ পাসের সুনাম অর্জন করেছে উত্তরা ৬নং সেক্টরে অবস্থিত রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। এ কলেজ থেকে ১ হাজার ৬৪৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সকলেই কৃতকার্য হয়েছে। অর্থাৎ শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।
জিপিএ-৫ পেয়েছে সর্বমোট ১৫৬৩ জন। বিজ্ঞান বিভাগে ১ হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সকলেই কৃতকার্য হয়েছে । জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫১ জন। জিপিএ- ৫ এর শতকরা হার ৯৭.৯৫%।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৮৫ জন। মানবিক বিভাগে ১৩৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৭ জন। এ কলেজের প্রাপ্ত জিপিএ-৫ এর শতকরা হার ৯৫.০৭% ।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম বাহাউদ্দিন এমন অসাধারণ সাফল্যে সব ছাত্র-ছাত্রীরের ধন্যবাদ জানান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সব ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় এই ভালো ফলাফল অর্জন হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকবে।
ঈর্ষণীয় ফল নটরডেম কলেজের: ঈর্ষণীয় ফল অর্জনকারী এ প্রতিষ্ঠানে পাশের হার ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩ হাজার ২৩০ জন শিক্ষার্থী। আর পাশ করেছে ৩ হাজার ২২৬জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৯০১ জন। বিগত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই হাজার ৮৩০ জন এবং পাশের হার ছিলো ৯৯.৯৪ শতাংশ।
বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করেছে ২ হাজার ৭৫ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৫ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজর ৬২ জন। বাণিজ্যে পাশ করেছে ৭৪৪ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ২ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯৫ জন। মানবিকে পাশ করেছে ৪০৭ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪৪ জন। এইচএসসির ফল প্রকাশের পর আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
জিপিএ-৫ পেয়ে নটর ডেম কলেজের ছাত্র মিনহাজুর রহমান প্রতিক্রিয়ায় জানান, কোন ধরনের কোচিং ও গৃহ শিক্ষক রাখার সামর্থ্য তার পরিবারের ছিল না। একাই চেষ্টা করে তিনি এ ফলাফল অর্জন করেছেন। মিনহাজ তার মা লিজা খাতুনের সঙ্গে আগাঁওগাও তালতলায় বসবাস করেন।
কলেজের শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গতবারের চেয়ে এবারে ফলাফল ভালো হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ হেমন্ত রোজারিও। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ বেড়েছে, এটি অবশ্য খুশির সংবাদ। আমাদের কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া আমাদের কলেজে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা হয়েছে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলেছি।
ঢাকা কলেজে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৮১ জন: ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজে পাসের হার হার ৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৮১ জন শিক্ষার্থী। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ হাজার ১৪৭ জন। অর্থাৎ, এবার জিপিএ-৫ কমেছে।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ঢাকা কলেজে এবার এইচএসসিতে পাশের হার ৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১ হাজার ১৫৩ জন, উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ হাজার ১৫১ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ১ হাজার ৮১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এ ছাড়া পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করলেও তিনজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
ভিকারুননিসায় আনন্দ-উল্লাস: দুপুরে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বছর তিনটি বিভাগে মোট ২ হাজার ৩৪৬ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ২ হাজার ৩৩৯ জন। অনুপস্থিত ছিলেন ৭ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে পাসের হার ৯৯.৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার এক জন শিক্ষার্থী।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ৮৫.৭০ শতাংশ। ফল পেয়ে দল বেঁধে ছাত্রীদের উল্লাস আর ‘ভিকারুননিসা, ভিকারুননিসা’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। জিপিএ-৫ পাওয়া নভেরা তালুকদার নোভা ভবিষতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নের কথা জানালেন।
এ ভালো ফলাফলের জন্য বাবা-মা এবং শিক্ষকদের অবদান স্বীকার করে তিনি বলেন, তাদের ইচ্ছা ও আমার চেষ্টায় এই অর্জন।
সাফল্যের শিখরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ: এবার কলেজের মোট ২১৫৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৩৪৪ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২৯১ জন এবং মানবিক বিভাগ থেকে ১৭৯ জনসহ মোট ১৮১৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। মোট শিক্ষার্থীর ৮৪ ভাগ জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাশের হার শতভাগ।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহ নয়ন জানালেন, নানা অনিশ্চয়তার মাঝেও এবারের শিক্ষার্থীদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। শিক্ষার্থীদের এই সাফল্যের জন্য সম্মানিত শিক্ষক ও অভিভাবকদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
মাইলস্টোন কলেজের অসাধারণ সাফল্য: এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজ। এবছর এ কলেজ থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ৩ হাজার ২২২ জন ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং পাশ করে ৩২২১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭৩৪ জন।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২৫৪৮ জন, যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪১৯ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৮৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়, যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬৮ জন। মানবিক বিভাগ থেকে ২৯০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৭ জন।
মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, এই ভালো ফলাফল আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের ফসল। এই সাফল্য ধরে রাখার পেছনে আমাদের অভিজ্ঞ একাডেমিক পর্ষদের গুণগতমানের পাঠপরিকল্পনা অত্যন্ত সহায়ক ভ‚মিকা পালন করেছে। শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করায় সত্যিই আমরা আনন্দিত।
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ: এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ প্রশংসনীয় সফলতা অর্জন করেছে। এ বছর মোট ৯৮৬ জন ছাত্র এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৯৫১জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাশাপাশি শতভাগ পাশের হার নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সফলতা ধরে রেখেছে।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৭৭৫ জন পরীক্ষার্থী থেকে ৭৫৫ জন জিপিএ-৫, মানবিক বিভাগে ১১০ জন পরিক্ষার্থী থেকে ১০২ জন জিপিএ-৫ এবং ব্যবসা বিভাগ থেকে ১০১ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ জানান, সাম্প্রতিককালে গৃহীত বিশেষ অ্যাকাডেমিক ও সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম, পাঠদানের সুশৃঙ্খল নীতিমালা, নিয়মিত শ্রেণিপাঠদানের পাশাপাশি তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত শ্রেণিপাঠদান, ছাত্রদের পাঠোন্নতির নিয়মিত মনিটরিং ইত্যাদি বিষয় এ বছরের প্রশংসনীয় ফলাফল অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ: এ বছরও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২ হাজার ৪০৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে শতভাগ পাশসহ মোট ২২৭৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।