Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ‘স্বচ্ছ তালিকা’ নিয়ে অস্বচ্ছ ধারণা

Icon

সরকার মাসুম, ইবি

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২০, ১০:৫৭ পিএম

আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ‘স্বচ্ছ তালিকা’ নিয়ে অস্বচ্ছ ধারণা

অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্মার্টফোন ক্রয়ে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্ভুল তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে সারা দেশে তালিকা প্রণয়নের কাজও শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়ে বিভিন্ন বিভাগে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এসএম আবদুল লতিফ। তবে বিজ্ঞপ্তিতে স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন নিয়ে জন্ম নিয়েছে অস্বচ্ছ ধারণা। তালিকা কীভাবে তৈরি হবে এবং আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীর অন্তর্ভুক্ত কে বা কারা হবেন- তা নিয়ে স্পষ্ট নেই।

৯ আগস্ট রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বল হয়, প্রত্যেক বিভাগে যেসব শিক্ষার্থীর ডিভাইস ক্রয়ে সক্ষমতা নেই তাদের বস্তুনিষ্ঠ তালিকা আগামী ১৯ আগস্টের মধ্যে রেজিস্টারের মেইলে প্রেরণ করতে হবে। রেজিস্ট্রার দফতর সেটি ইউজিসিতে পাঠাবে।

চিঠিতে শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রণয়নে একটি নমুনা ছক দিয়েছে। তাতে কেবল শিক্ষার্থীর নাম, পিতা, মাতা, গ্রাম, পোস্টঅফিস, উপজেলা ও জেলার নাম চেয়ে তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া আর কোনো নির্দেশনা নেই। এই সহায়তা প্রাপ্তির জন্য শিক্ষার্থীদের যোগ্যতাও বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করা হয়নি। এ নিয়ে বেধেছে নানা বিপত্তি। বিভাগীয় সভাপতিরা এই বস্তুনিষ্ঠ তালিকা কীভাবে প্রণয়ন করবেন? তা নিয়েও তৈরি হয়েছে বিড়ম্বনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরাও আবেদন করছে এ ডিভাইসের আশায়। তাদের ধারণা এটি সরকার কর্তৃক অনুদান দেয়া হচ্ছে। অনেকে ইতোমধ্যে বিভাগীয় সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। কীভাবে হবে আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের তালিকা এ নিয়ে ধোঁয়াশায় বিভাগগুলো।

বিভাগীয় সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের শুধু চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারাও চিঠিটি সেশনের সিআরদের কাছে প্রেরণ করেছেন। যারা আবেদন করবেন তাদের সব তালিকা রেজিস্ট্রিতে পাঠানো হবে।

কোন পদ্ধতিতে তালিকা করছেন- এমন প্রশ্নে তারা জানান, কোন ক্যাটাগরিতে তালিকা দিতে হবে এমন শর্ত না থাকায় কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি শিক্ষার্থীদের। এছাড়া এই ডিভাইস সহায়তা শিক্ষার্থীরা কী মাধ্যমে পাবে তা অস্পষ্ট। এই সহায়তা অনুদান নাকি ঋণ? এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।

আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘তালিকা তৈরির ব্যাপারে কোনো শর্ত উল্লেখ নেই। সচ্ছল-অসচ্ছল নির্বাচন করবে কীভাবে? যারা অসচ্ছল, সংসারে টানাপোড়েন, মেগাবাইট কেনার টাকার জন্য ভাবতে হয়- তাদেরই কেবল আবেদন করা উচিত।’

এদিকে এই বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে এখনও পৌঁছায়নি বলেও জানা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এসএম আবদুল লতিফ বলেন, আমাদের ইউজিসি থেকে যেটি প্রেরণ করেছে আমরাও সেটি বিভাগীয় সভাপতিদের কাছে প্রেরণ করেছি। তারা তালিকা প্রেরণ করলে আমরা সেটি ইউজিসিতে প্রেরণ করব। চিঠিতে সেটুকু বলা হয়েছে এর বাইরে আমার জানা নেই। কোন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ তালিকা করা হবে সেটিও জানা নেই।

এদিকে এই ডিভাইস ক্রয়ের জন্য কোনো অর্থ নাকি ডিভাইস সরবরাহ করা হবে- তা নিয়েও অনিশ্চিত শিক্ষার্থীরা। ফলে বিষয়টি যদি মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হয় তবে প্রকৃত অসচ্ছল ও হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়াবে বলেও মন্তব্য করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘সরকারের এ উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কত পার্সেন্ট ডিজিটাল ডিভাইস লাগবে এটি জরিপ চলছে। শিক্ষার্থীরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিনবে- সরকার তাদের হেল্প করবে। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনমতো ডিভাইস কিনবে। সুদমুক্ত কিস্তিতে এ সুবিধা দেয়া হবে। কিস্তিতে শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

তবে অসচ্ছলদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে কিসের ভিত্তিতে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে চিঠি আসছে তার বাইরে তো আমরা কিছু বলতে পারব না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম