শিক্ষার্থী-সাংবাদিকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে বেরোবি কর্মচারীর কুশপুত্তলিকা দাহ
বেরোবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ১২:৩৮ পিএম
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তার বরখাস্তের সংবাদ প্রকাশ না করার জেরে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতের দাবি জানিয়ে ‘নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’বিবৃতি দিয়েছিল। অসাংবিধানিক ও অনৈতিক বিবৃতি, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের নিয়ে ফেসবুকে ‘পতিতা, হকার, চাটুকার, কুলাঙ্গার’ উল্লেখ করে এক কর্মচারীর দেয়া মানহানিকর মন্তব্যের বিষয়ে ক্যাম্পাসসহ দেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এ ঘটনায় অত্র বিশ্ববিদ্যালয় ও সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নীরব ভূমিকায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে গত ২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ কর্মচারীর বরখাস্ত সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ না করার জেরে শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত চারজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে উল্লেখ করে, চার সাংবাদিক ৩ কর্মচারী বরখাস্তের সংবাদটি প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়নি। তারা কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের পজিটিভ সংবাদ প্রকাশ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন না। তাই সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে দাবি করে।
ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে সে দিন রাতে কর্মচারী খোরশেদ সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেসবুকে ‘পতিতা, হকার, চাটুকার, কুলাঙ্গার’ উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ঝাড়ুপেটা করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও দেন এ কর্মচারী। এতে করে এ কর্মচারী ও নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কর্মচারীর খোরশেদের কুশ পুত্তলিকা দাহ করেন। এ ছাড়া শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মচারীসহ প্রশাসনের সব সংবাদ বয়কট করে শাস্তির দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। পাশাপাশি দেশের ৩০টি সাংবাদিক সংগঠন থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং অবিলম্বে নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দদের ও কর্মচারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের সাংবাদিকরা একযোগে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে।
এ দিকে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের শাস্তির দাবি করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ ‘নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’র বিবৃতি এবং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কর্মচারী খোরশেদ আলমের করা কটূক্তিকে স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য কণ্ঠরোধী, অনৈতিক, অনভিপ্রেত ও অনধিকার চর্চা বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য দিনের পর দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তখন উপাচার্যের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে উত্তপ্ত করার জন্য সাংবাদিকদের নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও উদ্ভট মন্তব্য করার ধৃষ্টতা দেখায়।
এ বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক ড. নুর আলম সিদ্দিক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদেরকে এভাবে বলার অধিকার নেই ওই কর্মচারীর। অবশ্যই প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব) আতিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিয়ে নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ ও ওই কর্মচারী এমন মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না। এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আমরা কথা বলব।’
তবে নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ দিকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে এমন মন্তব্য করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অবগত করেই লিখেছেন বলে যুগান্তরের কাছে অকপটে স্বীকার করেছেন বর্তমান ভিসির আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী খোরশেদ আলম। যার ফোন রেকর্ড যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে।
খোরশেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি ফেসবুকে যা লিখেছি সবকিছুই অফিসিয়াল প্রসিডিউর মেইনটেইন এবং আমাদের উপাচার্য মহোদয়কে অবগত করে তারপর লিখেছি। আর যারা হলুদ সাংবাদিকতা করেন তাদের উদ্দেশে লিখেছি।’
ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।