রাব্বানীসহ ৩৪ ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে ঢাবির একাডেমিক কমিটিতে বাদানুবাদ
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ০১:২৫ এএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষকদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের সান্ধ্য প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের ৩৪ সাবেক ও বর্তমান নেতাকে পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি ও জিএস গোলাম রাব্বানীর নিয়মবহির্ভূত ভর্তি ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই বাদানুবাদ হয়।
সভায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ওই বিভাগের ভর্তিকে অবৈধ বলে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা।
আর এসব ভর্তি নিয়ম মেনেই হয়েছে বলে দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সোমবার বিকালে একাডেমিক কাউন্সিলের এই সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অধ্যাপক, বিভাগের চেয়ারম্যানরা, ইন্সটিটিউটের পরিচালকরা এই কাউন্সিলের সদস্য। বিকাল ৩টায় শুরু হয়।
নির্ধারিত এজেন্ডা শেষে ৩৪ ছাত্রলীগ নেতা ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর নিয়মবহির্ভূত ভর্তি নিয়ে কথা বলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। তার বক্তব্য থেকেই বাদানুবাদের সূত্রপাত হয়।
বক্তব্যে ড. ওবায়দুল বলেন, গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি ছাত্র সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান ৩৪ নেতাকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধীনে পরিচালিত ‘মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে’ বিনা ভর্তি পরীক্ষায় বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি করা হয়।
নজিরবিহীন ও অশ্রুতপূর্ব এ ঘটনায় আমরা দারুণভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। ঘটনাটি জানার পর অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভর্তিকৃতদের ভর্তি বাতিল ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি জানিয়েছি।
ভিসির উদ্দেশে অধ্যাপক ওবায়দুল বলেন, আমরা আশা করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে এর সমাধান করবেন। দুঃখের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩৪ জনের ভর্তি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এমনকি শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হলে তাদের ওপর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দমন-নিপীড়নের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর এমফিলে ভর্তিতে অনিয়ম তুলে ধরে তিনি বলেন, ৩৪ শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তির প্রতিকার না হতেই ডাকসুর নির্বাচিত জিএস এর ক্রিমিনোলজি বিভাগে এমফিল ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হয়েছে। বিধিবহির্র্ভূতভাবে এসব অবৈধ এবং নীতি গর্হিত ভর্তি প্রক্রিয়ার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এরূপ নীতি গর্হিত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নৈতিক স্খলনের অপরাধে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।
বক্তব্যে অধ্যাপক ওবায়েদ আরও বলেন, আজকের এই একাডেমিক কাউন্সিলের সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বডির সভা। এই সভায় মোট ৩৫ জন অবৈধ ভর্তি প্রক্রিয়ার তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করছি। এই কমিটির কাজ হবে অনিয়ম তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা।
অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলামের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগপন্থী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা।
এ বিষয়ে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও সুনাম রক্ষার্থে আমি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কথাগুলো বলেছি।
ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে কোনো হট্টগোল হয়নি। একটি মহল বিষয়টি নিয়ে অপরাজনীতির চেষ্টা করছে। একাডেমিক কাউন্সিল আসলে এ বিষয়ে বলার কথা না। তবুও সে (ওবায়দুল ইসলাম) বলতে চেয়েছে, গণতান্ত্রিক মূলবোধের দিকে খেয়াল রেখে কথা বলতে দেয়া হয়েছে। যাতে অসংসদীয় কিছু কথা ছিল। সেগুলো এক্সপাঞ্জ করা হয়েছে। ভর্তি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন ও সেখানকার বেশ কয়েকজন অধ্যাপক যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা গ্রহণ করা হয়েছে।