
প্রিন্ট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৩১ এএম
আবরার হত্যার দিনে ঢাবির সেই আবু বকরকে স্মরণ

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:৪৩ পিএম

আবরার ফাহাদ ও আবু বকর সিদ্দিক। ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে ছাত্রসমাজ।
রোববার রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষের ভেতর পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার সঙ্গে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত।
হত্যার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
এরপর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
সমাবেশে ডাকসু ভিপি ও কোটা আন্দোলনের নেতা আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিকের কথাও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, স্যার এএফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আবু বকর নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছিলেন। এসএম হলের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান মোল্লা ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দলদাস প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ সময় ভিপি নুর ছাত্রলীগের হাতে নিহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র জোবায়ের হোসেন হত্যাকাণ্ডের কথাও স্মরণ করেন।
এ ছাড়া জগন্নাথ হলের সামনে পথচারী বিশ্বজিৎকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন তারও ঊল্লেখ করেন নুর।
প্রসঙ্গত টাঙ্গাইলের দিনমজুর বাবার সন্তান আবু বকর সিদ্দিক পড়তেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। থাকতেন স্যার এফ রহমান হলে। ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মারা যান তিনি।
আবু বকরের মৃত্যুর ৪২ দিন পর তার চতুর্থ সেমিস্টারের ফল প্রকাশ হয়েছিল। তাতে তিনি যুগ্মভাবে প্রথম হন।
আবু বকর তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩.৭৫ পেয়েছিলেন। চতুর্থ সেমিস্টারের ফল বের হওয়ার আগে তিনি খুন হন। ওই বিভাগে তার আগে এমন ভালো ফল কেউ করেননি।
ঘটনার পর একই হলের আবাসিক ছাত্র ওমর ফারুক বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুকসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় শাহবাগ থানার পুলিশ।
পরে বাদীর নারাজি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সিআইডি মামলাটির অধিকতর তদন্ত করে এবং ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেয়। তাতে আগের আটজনসহ আরও দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
কিন্তু এই হত্যা মামলার রায়ে ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতাকর্মীর সবাই বেকসুর খালাস পান। রায় হওয়ার আট মাস পর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পায়। রায়ের বিষয়ে আবু বকরের বাবা-মা, এমনকি বাদীকে রায় সম্পর্কে জানানো হয়নি।
এছাড়া ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লা ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মারা যান।
জানা গেছে, হাফিজুর থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলের বারান্দায়, গভীর রাতেও তাকে যেতে হতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে।
এর ধকল সইতে না পেরে নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে চলে যান গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় ভালো চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রওনা দেয়ার পথেই মারা যান তিনি।