ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে ডাকসুর ভিপি-এজিএস মুখোমুখি
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫৫ এএম
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন। ফাইল ছবি
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ’ নিয়ে অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর এবং এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
ভিপি নুর বলছেন, নিবন্ধিত কোনো দলের ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার ঢাবি কর্তৃপক্ষ বা ডাকসুর নেই। এছাড়া ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ডাকসুর সর্বসম্মতভাবে নেয়া হয়নি।
অপরদিকে এজিএস সাদ্দাম বলছেন, ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার ডাকসুর পেডে নিজের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিজের অবস্থান কী- সে বিষয় স্পষ্ট করেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর৷ তিনি বলেন, ‘সাধারণ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেটা নয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ৷’
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসু ভিপি বলেন, ‘গত ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মিটিংয়ে ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন ও সদস্য রাকিবুল ইসলাম ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রস্তাব তুলেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক প্রচলিত আইন ও নিয়ম-কানুন মেনে যেসব রাজনৈতিক দল তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, কিংবা যেসব ধর্মভিত্তিক দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নিয়ে রাজনীতি করছে, ঢাবিতে তাদের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণে ডাকসু বা ঢাবি কর্তৃপক্ষের কোনো এখতিয়ার নেই। সুতরাং এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা ডাকসু থেকে নিতে পারি না।’
ভিপি নুর বলেন, ‘তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নয় বরং উগ্রপন্থী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠন যাতে ঢাবিতে কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাতে না পারে, সেজন্য ডাকসু থেকে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।’
নুর বলেন, ‘মিটিংয়ের এক পর্যায়ে ৩৪ জন ছাত্রলীগের নেতার অবৈধভাবে ভর্তি ও জিএসের পদে থাকা নিয়ে আলোচনা তুললে অবৈধভাবে ভর্তি হওয়া ডাকসু নেতাদের ব্যক্তি আক্রমণাত্মক কথাবার্তায় আমি সভা বর্জন করে বের হয়ে আসি। আমার অনুপস্থিতিতে তারা নিজেদের মতো করে সংযোজন বিয়োজন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং তা ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের স্বাক্ষরসহ প্রকাশ করে। যা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নয়।’
তবে ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে নেয়া হয়েছে দাবি করে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে ডাকসুর এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ডাকসুর বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ ডাকসুর গঠনতন্ত্রেও এটা অন্তর্ভুক্ত হবে৷’
এদিকে শুক্রবার প্রেসক্লাবের সামনে ডাকসু কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় সংগঠনের নামে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, ডাকসু হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত পরিবেশে বহুমত-পথের মিথস্কিয়ায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরও বলেন, তিন দশক পরে কলংকিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ডাকসুর নেতৃবৃন্দ এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটিকে কলংকিত করছে। ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব পাশ করে ডাকসু একটি অসাংবিধানিক ও অধিকার বহির্ভূত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্যাম্পাসে কে কোনো মত ও পথের রাজনীতি করবে তা নির্ধারণ করার এখতিয়ার ডাকসু রাখে না।